
ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরে কিশোর রিহান উদ্দিন মাহিনকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের একের পর এক দ্রুত জামিনে মুক্তি পাওয়ায় ন্যায়বিচার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবার। মামলার অগ্রগতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
গত ২২ আগস্ট উপজেলার কাঞ্চননগরে চোর সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে স্থানীয়দের উত্তেজিত করে ১৬ বছর বয়সী কিশোর মাহিনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় রাহাত ও মানিক নামে আরও দুই কিশোর গুরুতর আহত হয়।
ঘটনার রাতে নিহতের মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রতিবেশী মাষ্টার নাজিম উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ এবং আরও ৫–১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়। ইতোমধ্যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, তবে মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত মাষ্টার নাজিম উদ্দিন, মহিউদ্দীন ও তৈয়ব এখনো পলাতক।
এদিকে মামলার ২ নম্বর আসামি মোহাম্মদ নোমানকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশ। দক্ষিণ কাঞ্চননগরে ৫নং ওয়ার্ডের আবুল কাশেমের ছেলে নোমান আদালতে ১৬৪ ধারায় নিজের দোষ স্বীকার করে ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে এবং কারা এতে জড়িত – তার পূর্ণ বর্ণনা দেন। তিন মাস জেল খাটার পর সম্প্রতি তিনি হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের জামিনে মুক্তি পান।
অন্যদিকে একই মামলার আরেক আসামি মোঃ তানভীর হোসেন পিতাঃ মোঃ আবছার, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেও আটকের এক মাসের মধ্যেই শিশু আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসে।
নিহত মাহিনের মা খাদিজা বেগম বলেন, একজনের পর একজন আসামি এত দ্রুত জামিনে বের হয়ে আসায় আমরা আতঙ্কে আছি। মামলার সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যে কোনো সময় আসামিরা দেশত্যাগ বা আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে ভয় হয়। তিনি আরও জানান, মামলা তুলে নিতে আসামিপক্ষের স্বজনরা হুমকি-ধমকি ছাড়াও মোটা অংকের অর্থের লোভ দেখাচ্ছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফটিকছড়ি এস আই ফারুক বলেন, এ ধরনের হত্যা মামলায় এত দ্রুত আসামিদের জামিন পাওয়া সমীচিন নয়। এজাহারের ২ নাম্বার আসামি ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিল এবং ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে অন্য আসামিদের নামও প্রকাশ করেছে। এমন একজন আসামির এত দ্রুত জামিন পাওয়া অনুচিত ছিল। আরেক শিশু আসামিও ১৬৪ ধারায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে তবুও জামিন পেয়েছে, যা ভাবনার বিষয়। এতে ভিকটিম পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একজন ঘটনাস্থলেই মারা গেছে এবং দুইজন এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে চলাফেরা করতে পারছে না। এভাবে খুনের আসামিরা সহজে জামিন পেলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন,
উচ্চ আদালতের জামিন বিষয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। তবে একজন এজাহারভুক্ত আসামির এমন দ্রুত জামিনে মুক্তি – বাদী পক্ষ হিসেবে আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
স্থানীয় সচেতনমহল মনে করছেন – হত্যা মামলার আসামিরা একের পর এক জামিন পেতে থাকলে মামলার সঠিক তদন্ত ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ন্যায়বিচার নিয়ে সাধারণ মানুষের মনেও সন্দেহ তৈরি হবে। তারা বলেন, আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা টিকিয়ে রাখতে এই ধরনের সংবেদনশীল মামলায় বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
ফটিকছড়ি থানার ওসি নূর আহমদ বলেন,
জামিন চাওয়া প্রতিটি আসামির অধিকার। তবে উচ্চ আদালতের দেয়া জামিনের শর্ত ভাঙলে তা বাতিল হতে পারে। তদন্তে ব্যাঘাত ঘটানো, সাক্ষীদের প্রভাবিত করা বা বাদীকে হুমকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এজাহারনামীয় ৫ আসামির মধ্যে ২ জন জামিনে, ৩জন পলাতক এবং গ্রেপ্তারকৃত আরও কয়েকজন তদন্তাধীন।
মাহিনের পরিবার বলছে – ধারাবাহিক জামিনে মূল আসামিরা বেরিয়ে গেলে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবো।







