আজ মহান বিজয় দিবস

আজ মহান বিজয় দিবস
আজ ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। আমাদের চিরগৌরবের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন আজ। বাংলাদেশ নামে নতুন একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের আত্মপ্রকাশ ঘটে এদিন।
১৯৭১ সালের এই দিন দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল বীর বাঙালি। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও অসংখ্য মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় বাঙালি জাতির স্বাধীনতার চূড়ান্ত স্বীকৃতি। এই ডিসেম্বরের কুয়াশা ঢাকা বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার সূর্য, উড্ডীন হয়েছিল লাল-সবুজ পতাকা।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেছেন, ‘১৬ ডিসেম্বর দিনটি আমাদের জাতীয় গৌরবের প্রতীক, স্বাধীনতার চূড়ান্ত সাফল্যের স্মারক।’ বিজয়ের আনন্দঘন এ দিনে তিনি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বিজয়ের শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাই একযোগে কাজ করব- এটাই হোক মহান বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণীতে বলেছেন- ‘১৬ ডিসেম্বর, আমাদের মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে এই দিনে আমরা পাই কাঙ্ক্ষিত বিজয়ের স্বাদ। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা আর লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাই একটি স্বাধীন জাতিসত্তা আর এই লাল-সবুজের পতাকা।’ তিনি এই দিনে দেশে ও বিশ্বজুড়ে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বিজয়ের উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘আসুন, বহু কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিতে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি। ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবাই মিলে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাই শান্তি এবং সমৃদ্ধির পথে।’

মহান বিজয় দিবসের সূচনা হয় ভোরের প্রথম প্রহরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে। ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান।

দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশে সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ভবন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। দেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত, মন্দিরে প্রার্থনা, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ উপাসনার আয়োজন করে, যাতে দেশ ও জাতির অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করা হয়।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, সেমিনার, শিশু-কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়। টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠান, সাক্ষাৎকার ও প্রামাণ্যচিত্র। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকাগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।

কর্মসূচি : বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ছায়ানট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email