
বিশ্বমানবের একমাত্র শান্তি ও মুক্তির জীবনব্যবস্থা ইসলাম। এটাই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ (দ্বীন) জীবন ব্যবস্থা। কেয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নতুন দ্বীন প্রবর্তনের অবকাশ নেই। অতএব, কেয়ামত পর্যন্ত দেশ-দেশান্তরে যুগ-যুগান্তরে বর্ণ ও গোত্র-বংশ নির্বিশেষে সবার কাছে এই সুমহান দ্বীনই অনুসৃত ও প্রতিপালিত হবে।
জীবনের এমন কোনো অঙ্গন নেই, যেখানে ইসলামের বিধান ও শিক্ষা নেই। সেই শিক্ষা ও বিধান যখন আমরা ভুলে যাই তখনই আমাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসে। আখেরাতের ভয়াবহ শাস্তি তো আছেই, দুনিয়ার জীবনও বিপর্যস্ত হয়ে যায়। ইসলামে নারীর অধিকার বিশেষভাবে স্বীকৃত। নর-নারীর সমন্বয়েই মানবজাতি। নারী মহান আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত। ইসলাম পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীকে অত্যন্ত সম্মানজনক সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে এরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা তোমাদের গৃহেই অবস্থান করবে, প্রথম জাহেলিয়া যুগের নারীদের ন্যায় নিজেদের প্রদর্শন করো না। আর নামাজ কায়েম করো, জাকাত আদায় করো, আর আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসুলের অনুগত থাক। আল্লাহতায়ালা তো শুধু তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের পরিপূর্ণভাবে পবিত্র করতে চান। (সুরা আহজাব : ৩৩)।
অর্থাৎ নিজেদের হেফাজতের উত্তম পন্থা হলো মেয়েদের স্বগৃহেই অবস্থান করা। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। যদি একান্ত প্রয়োজন হয়, তবে শরিয়ত মোতাবেক পর্দা করে বের হওয়া। ইসলাম নারী জাতিকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা। আর এ মর্যাদা রক্ষায় এবং নারী জাতির পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ রাখতে যা একান্ত জরুরি, তারই নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।
বলা বাহুল্য, বর্তমান যুগে তথাকথিত নারী স্বাধীনতার নামে যে নগ্ন সভ্যতার প্রচলন হয়েছে তা নতুন কিছু নয়, বরং বর্বরতার যুগেও এভাবেই নারীরা নিজেদের সাজসজ্জা শোভা সৌন্দর্য দেখিয়ে ফিরত। ইসলামের আবির্ভাবের মাধ্যমে এ অন্যায়-অনাচার বন্ধ হয়েছিল। কেননা, ইসলাম মাতৃজাতির সম্মান রক্ষা করতে চায়। মানবতার কল্যাণ এবং সভ্যতার বিকাশ করতে চায়। এ জন্যই ইসলাম নির্লজ্জতা এবং বেলেল্লাপনার অনুমতি দেয় না। নারী জাতির স্বেচ্ছাচারিতা এবং তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি অশ্লীলতা ইসলাম বরদাশত করে না। এটি নিঃসন্দেহে আত্মহনন ব্যতীত আর কিছুই নয়।
নারী অন্দর মহলের শোভা-সৌন্দর্য রূপেই তার প্রতি অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুক- এটিই ইসলামের একান্ত কাম্য। কোনো কোনো অপরিণামদর্শী লোককে এ কথা বলতে শোনা যায় যে, নারীসমাজ জাতির অর্ধেক। যদি নারীসমাজকে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করতে না দেওয়া হয়, তবে জাতির অর্ধাংশকে অকার্যকর করে রাখা হয়। আর জাতির উন্নতির পথে এটি হয় বড় বাঁধা। প্রকৃতপক্ষে কথাটি সত্য নয়। কেননা, ইসলাম নারীকে গৃহবন্দি এবং নিষ্ক্রিয় করে রাখতে চায় এমন নয়। বরং ইসলাম নারীকে জাতীয় জীবনের উন্নতি-অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালনের তাগিদ দেয়।
কেননা জাতির ভবিষ্যৎ তাদেরই কোলে গড়ে ওঠে। মাকেই তার সন্তানকে চরিত্রবান, বিভিন্ন গুণের অধিকারী করে প্রস্তুত করতে হয়। এটি তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ দায়িত্ব। তারা যদি এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন, তবে এটিই হবে জাতীয় উন্নতির ক্ষেত্রে তাদের বিরাট অবদান। বর্তমান যুগে নারী স্বাধীনতার যে ধুঁয়া উঠেছে এবং মাতৃজাতিকে রাজপথে টেনে আনা হয়েছে, পরিণামে সন্তান তার মায়ের স্নেহ প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণেই এখন সুশিক্ষিত সুনাগরিক এবং চরিত্রবান যুবক খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। যে সত্যটি সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে তা হলো- নারীজাতির কর্মক্ষেত্র তার গৃহ, বাইরে নয়। পুরুষের কর্মক্ষেত্র বহির্বিশ্ব।
জীবন সাধনায় নর-নারী উভয়ের দায়িত্ব অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ সাফল্যের মনিমানিক্য সংগ্রহ করে আনবে। আর নারী তা সংরক্ষণ করবে। অতএব, প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আজকের দুনিয়ায় যে অশান্তি বিরাজমান, তা দূর করার একমাত্র পথ হলো পবিত্র কোরআনের শিক্ষাগ্রহণ এবং প্রিয় নবি (সা.)-এর পরিপূর্ণ অনুসরণ। আলোচ্য আয়াতে নারীজাতি সম্পর্কে যে পথনির্দেশনা রয়েছে, তার প্রেক্ষিতে ইসলামি শরিয়ত কয়েকটি বিধান প্রণয়ন করেছে-
১. নারীদের অপ্রয়োজনে এত উচ্চঃস্বরে কথা বলা বৈধ নয়, যা পুরুষ শ্রবণ করে। ২. নারীদের আজান দেওয়া বৈধ নয়। ৩. একান্ত জরুরি না হলে বাড়ি থেকে বের হবে না। ৪. তারা তাদের চক্ষুর হেফাজত করে চলবে। তথা পরপুরুষের প্রতি দৃষ্টি করবে না। ৫. যদি কোনো পরপরুষের সঙ্গে কথা বলার একান্ত প্রয়োজনই হয়, তবে তা বলতে হবে পর্দার আড়াল থেকে। ৬. নিতান্ত প্রয়োজনে নারীদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কয়েকটি শর্তে- ক. বাইরে যেতে হলে অবশ্যই পর্দা করে যেতে হবে। খ. কোনো প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে যাবে না। গ. অভিভাবক অথবা স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বাইরে যাবে না। ঘ. স্ত্রীলোক রাস্তার মধ্য দিয়ে চলবে না, বরং একপার্শ্ব দিয়ে হেঁটে যাবে। ৭. ইসলামি শরিয়ত এ নির্দেশ দিয়েছে যে, কেউ যেন কারও গৃহে অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ না করে।
বর্বরতার যুগের অন্যায়-অনাচার এবং ব্যভিচারের পথ রুদ্ধ করার নির্দেশের পর আলোচ্য আয়াতে শরিয়তের এমন কিছু বিধান পেশ করা হয়েছে, যা পালনের মাধ্যমে মানুষ আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করতে পারে এবং মানুষকে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। আর তা হলো যথানিয়মে, যথাসময়ে সঠিকভাবে নামাজ কায়েম করা ও জাকাত আদায় করা, দুঃখী মানুষের দুঃখ নিবারণে আত্মনিয়োগ করা। এ সমস্ত নির্দেশের একমাত্র কারণ হলো, আল্লাহতায়ালা তোমাদের পাপাচার থেকে দূরে রাখতে চান। তোমরা যেন এমন কাজ থেকে বিরত থাক, যা আল্লাহতায়ালার অপছন্দনীয়।
নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলাম যে ভূমিকা রেখেছে, ইসলামের আগে পৃথিবীর বুকে কোনো ধর্ম বা সভ্যতা এভাবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ইসলাম ও মহানবী (সা.) বিশ্বব্যাপী নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এক কালজয়ী আদর্শ স্থাপন করেছেন। মানব-মন ও মানবসমাজে নারী প্রগতির গোড়াপত্তন করে এক বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করেছেন।
দূরীভূত করেছেন নারী-পুরুষের ভেদাভেদ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে মুমিন পুরুষ অথবা নারী সৎকর্ম করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তাদের বেহিসাব রিজিক দেওয়া হবে।’ (সুরা মোমিন : ৪০)।
ইসলামের কষ্টিপাথরে নারী-পুরুষের মর্যাদা তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলাম নারীকে শুধু পুরুষের সমমর্যাদা নয়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষ থেকে নারীকে অধিক মর্যাদা দিয়েছে। মা হিসেবে ইসলামে একজন নারীকে একজন পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ও মর্যাদার অধিকারী করেছে।





