
সময়ের ধারায় তারেক রহমান বদলেছেন। রাজনীতিবিদ থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন জনতার প্রতিনিধি। বক্তৃতার শব্দে নয়, বরং ধৈর্য, সহমর্মিতা আর প্রত্যাশার ভাষায় তিনি কথা বলেন। তার নেতৃত্বে মানুষ খুঁজে পান আশ্বাস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস, আর ভবিষ্যতের প্রতি দিশা।
জনতার রাজনীতিতে যেখানে ক্ষমতার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে মানুষের অধিকার, আর নেতৃত্বের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে দায়িত্ব। এই পথচলা আবেগের, সংগ্রাম এবং আশার।
শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকায় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ের উত্তাল সময়ের মধ্য দিয়ে। তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন।
কৈশোরে তারেক রহমান রাজনৈতিক পরিবেশ খুব কাছ থেকে দেখেন। এ সময় পিতার রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশ পরিচালনার পাশাপাশি নবগঠিত বিএনপিকে এগিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন। তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক ও জনসম্পৃক্ত কাজে প্রাথমিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পড়াশোনার সময় তিনি সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, হবস, লক, রুশো, ভলতেয়ার ও কার্ল মার্কসের মতো মহান দার্শনিকদের চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হন, যা তার রাজনৈতিক দর্শনকে সমৃদ্ধ করে।
আশির দশকে স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে একজন তরুণ রাজনীতিক হিসেবে তারেক রহমানের ব্যক্তিত্ব গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কারণ সময়টি ছিল তার মা খালেদা জিয়ার সাতদলীয় জোটের ব্যানারে রাজপথে আপসহীন নেতৃত্ব দেওয়ার কাল। যা তারেক রহমানের চিন্তা ও মনন গঠনে ব্যাপক অবদান রাখে।
তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে বগুড়ার গাবতলী উপজেলা বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেন। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসনের পতন ঘটলে ১৯৯১ সালে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হয়। এ সময় তারেক রহমান মায়ের সঙ্গে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় নির্বাচনি প্রচারে যান। এ নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে এবং বেগম জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন।
পরে তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে তিনি গোপন ব্যালটের মাধ্যমে জেলা নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া চালু করেন। তিনি ২০০১ সালে রাজধানীতে একটি গবেষণা দফতর স্থাপন করেন। সেখানে স্থানীয় সরকার ও সুশাসন বিষয়ে গবেষণা হয়। এসব আধুনিক ও সময়োপযোগী উদ্যোগ ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভূমিধস বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এ সময় তিনি সাধারণ মানুষের পাঠানো ১৮ হাজারেরও বেশি চিঠির উত্তর দেন। এই জনসম্পৃক্ততার পথ ধরেই তিনি কৃষকদের ভর্তুকি, বয়স্ক ভাতা, পরিবেশ রক্ষা এবং সমাজে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে নারী শিক্ষার প্রসারে বৃত্তি চালুসহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
তারেক রহমান ১৯৯৪ সালে চিকিৎসক জুবাইদা রহমানকে বিয়ে করেন। জুবাইদা রহমান সাবেক নৌবাহিনী প্রধান ও দুইবারের মন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের মেয়ে। ডা. জুবাইদা রহমান একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান ব্যারিস্টার জাইমা রহমান বর্তমানে আইন পেশায় নিয়োজিত।
তারেক রহমান ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারান। কোকো মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন। একদিকে ছোট ভাইকে হারানো এবং একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জনগণের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার বিষয়টি তারেক রহমানকে আরও মানবিক ও সহানুভূতিশীল নেতৃত্বে উদ্বুদ্ধ করে।
তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ৭ মার্চ কোনো আগাম অভিযোগ বা নোটিস ছাড়াই তারেক রহমানকে আটক করে। ১৮ মাসের বন্দিজীবনে তিনি পুলিশ রিমান্ডে ভয়াবহ নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের শিকার হন। তিনি ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পান। তার শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য এক সপ্তাহ পর বিদেশে পাঠানো হয়।
এই তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলোই তার নৈতিক সাহস এবং দল ও জাতির প্রতি অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করেছে। তারেক রহমানের বিচক্ষণ ও দক্ষ রাজনৈতিক চিন্তাধারা কেবল জাতীয় পর্যায়েই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃত হয়েছে। দেশের রাজনীতিকদের প্রতিহিংসা ও সংঘাতের পথ পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে দেশকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।







