জামায়াত-এনসিপি-এলডিপি জোট: নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

জামায়াত-এনসিপি-এলডিপি জোট: নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ

দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-এর মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতার ঘোষণা।

রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই সমঝোতার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।

তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থী ও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে এগোচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির জানান, এর আগে জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি রাজনৈতিক দল একটি অভিন্ন রাজনৈতিক বোঝাপড়ার আওতায় মাঠে সক্রিয় ছিল।

সাম্প্রতিক আলোচনার ধারাবাহিকতায় সেই জোটে নতুন করে যুক্ত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। ফলে সমঝোতায় অংশ নেওয়া দলগুলোর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

শফিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আসন সমঝোতা হয়েছে। লক্ষ্য একটাই ভোট বিভাজন রোধ করে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করা।

তিনি আরও জানান, কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই জোটে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও বর্তমান বাস্তবতায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে ভবিষ্যতে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতিতে যে শূন্যতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, এই সমঝোতা তারই একটি ফল। আগে থেকেই জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই ছয়টি দল আসনভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে সব আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিও এই জোটে যুক্ত হয়। এই আটটি দল একাধিক দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে আসছিল।

নতুন করে এনসিপি ও এলডিপির যুক্ত হওয়ায় জোটটির রাজনৈতিক গুরুত্ব আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এনসিপি নিজেকে নাগরিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে এলডিপি দীর্ঘদিন ধরে সরকারবিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় একটি দল। এই দুই দলের সংযুক্তি জোটের পরিধি ও ভোটব্যাংককে বিস্তৃত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে এই সমঝোতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে। সমালোচকদের একটি অংশ মনে করছে, আদর্শিক ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও কেবল নির্বাচনী হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে গঠিত জোট দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নাও হতে পারে। আবার অন্যদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া সরকারবিরোধী শক্তির পক্ষে কার্যকর ভূমিকা রাখা কঠিন।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ বা নির্দিষ্ট আসন বণ্টনের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করলেও ইঙ্গিত দেন, প্রয়োজন হলে তা সময়মতো জানানো হবে। তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষের অধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রশ্নে একমত হয়েছি। সেই লক্ষ্যে সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। জামায়াতকেন্দ্রিক এই জোট কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে, তা নির্ভর করবে মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক শক্তি, ভোটারদের সাড়া এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির গতিপথের ওপর। তবে এটুকু নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই সমঝোতা আগামী দিনে দেশের নির্বাচনী রাজনীতিকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email