
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে আমাদের মূল শিক্ষা হলো পরিবর্তন— সমাজের প্রতিটি স্তরে মেধা, জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। তরুণ প্রজন্মের চিন্তা-ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে জাতিকে এগিয়ে নিতে হবে। আর এক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা ব্যাপক। কারণ তারা তরুণ প্রজন্মকে শেখান।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে অনুষ্ঠিত “চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা প্রত্যেকে যে অবস্থানেই কাজ করি না কেন, সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। শিক্ষকরা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, কারণ তারা নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলেন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো গবেষণার কেন্দ্র। তাই খাতভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। কর্মমুখী ও সময়োপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন ছাড়া আমরা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব না। শিক্ষা কেবল সার্টিফিকেট নয়, বরং তা হতে হবে নৈতিক, মানবিক ও বাস্তবমুখী।
কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু সরকারের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের উদ্যোগেও কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। আত্মনির্ভরশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান আমাদের দিয়েছে পরিবর্তনের শিক্ষা। এটি কেবল একটি আন্দোলনের পরিণতি নয়, বরং ১৫–১৬ বছরের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জনরোষের ফলাফল। সেই পরিবর্তন এখন প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজন — চিন্তায়, কাজে, দৃষ্টিভঙ্গিতে।
সংস্কার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সংস্কারের আগে মানসিক পরিবর্তন জরুরি। শুধু আইন করলেই হবে না, মানসিকতা না বদলালে কোনো সংস্কার কার্যকর হবে না। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী আইনগত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে পারলে জাতির মুক্তি আসবে।
জুলাই সনদ নিয়ে তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন আমরা নাকি চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হয়েছি— বিষয়টি ঠিক নয়। আমরা বলেছি, জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট হতে পারে। জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা চলছে, কিছু দাবি-দাওয়া আছে। আশা করছি, সবার মতামতের ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত সমাধান হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা চাইলে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জুলাই সনদকে আইনি কাঠামো দিতে পারেন।
স্বাগত বক্তব্যে ইউট্যাবের মহাসচিব ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, শিক্ষা হলো জাতি গঠনের ভিত্তি। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সার্টিফিকেটনির্ভর হয়ে পড়েছে, যা বেকারত্ব বাড়িয়েছে। এখন সময় এসেছে জ্ঞানভিত্তিক ও চাহিদানির্ভর শিক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়ার।
সভাপতির বক্তব্যে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের অবহেলায় শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাই যুগোপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ১৭ বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে শিক্ষার জঞ্জাল দূর করাই এখন প্রধান কাজ।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন— স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ. ফ. ম. ইউসুফ হায়দার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা রেহান এ আসাদ প্রমুখ।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার।
উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রোভিসি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।