
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, “বিএনপির জন্ম হয়েছিল ‘হ্যাঁ’ ভোটের মধ্য দিয়ে। বিএনপি যদি ‘না’ ভোটে স্ট্রিক্ট থাকে, তাহলে বিএনপির মৃত্যু হবে ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে।” তিনি আরও বলেন, “বিএনপি একটি বড় দল। আমরা বলব, ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে নিজেদের মৃত্যুর কবর রচনা করবেন না।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘রাজনীতির বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অস্পষ্টতার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে ঠেলে দিতে পারব না। গণভোট আগে হবে, না হবে—এটা জামায়াত ও বিএনপির কুতর্ক। তাদের উচিত নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা। দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার ড্রাফট প্রকাশ করতে হবে এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এটি না হলে এবং দেশ যদি গৃহযুদ্ধের দিকে যায়, তার দায় প্রধান উপদেষ্টাকে নিতে হবে।”
জামায়াতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপার হাউজের পিআর, লোয়ার হাউজে এনে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন। কিন্তু গণভোট প্রশ্নে জামায়াত একসময় বিএনপির সঙ্গে একত্র হয়ে যাবে। তারা দুই দল মিলে আসলে কুতর্ক করছে।”
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে কোনোভাবে মেনে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, “জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। অনেকেই বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের ৫ লাখ নেতাকর্মীর প্রাণ যাবে। আমরা কিন্তু তাদের গায়ে হাত দেইনি। কিন্তু যদি তারা বাধা দেয়, কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। বিএনপিকে বলব, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনবেন না।”
তিনি মন্তব্য করেন, “নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিকভাবে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। এই কমিশনের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। কমিশন যদি রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত থাকে, তাহলে নির্বাচনের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত হয়ে যায় এবং জনগণের আস্থা হ্রাস পায়। এ অবস্থায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ছাড়া গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।”
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দল রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছিল। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে, সিদ্ধান্তটি ছিল সঠিক ও দূরদর্শী। সেই সময়ে অনেকেই রাজনৈতিক সুযোগের আশায় তাড়াহুড়ো করে সনদে সই করেছিলেন, কিন্তু আমরা বুঝেছিলাম এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। বর্তমানে সংস্কার কমিশনের যে সুপারিশনামা এসেছে, প্রস্তাবনা-১ বাস্তবায়নই সরকারের প্রধান করণীয়। এর বাইরে অন্য কোনো বিকল্প পথ থাকা উচিত নয়।”
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সংস্কার কমিশনের ড্রাফট প্রকাশ না করার বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “ড্রাফট উন্মুক্ত না করলে এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্যের আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রকাশ করলে যদি প্রস্তাবনাগুলো সঠিক ও বাস্তবসম্মত হয়, আমরা তা সমর্থন করব। কিন্তু জনগণের অজান্তে কোনো প্রক্রিয়া চললে আমরা অংশ নেব না।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে আস্থাহীনতা, পক্ষপাত ও অনিশ্চয়তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন ও গণভোটের মতো জাতীয় সিদ্ধান্তগুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই সময়ের দাবি।”







