সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদাত বরণকারী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদির মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট।
শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মরদেহ বহনকারী বিমানটি যাত্রা শুরু করে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, বিজি,৫৮৫ ফ্লাইটটি আজ সন্ধ্যা আনুমানিক ৫টা ৯০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
প্রিয় নেতার ফেরার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শাহবাগের ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া আরও গভীর হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিমানবন্দর থেকে মরদেহ সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জুলাই বিপ্লবের এই বীরকে সম্মান জানাতে বিমানবন্দর থেকে শাহবাগগামী সড়কের দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নিতে নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এই সময় সবাইকে সর্বোচ্চ সংযম ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ করা হয়।
এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ চলাকালে রিকশা আরোহী ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। ঘাতকের বুলেট সরাসরি তাঁর মাথায় বিদ্ধ হলে তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গত সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ লড়াই শেষে বৃহস্পতিবার রাতে কোটি ভক্ত ও দেশবাসীকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান এই সাহসী তরুণ নেতা।
হাদির মৃত্যুতে আজ সারা দেশে শোকের আবহ বিরাজ করছে। জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমসহ দেশের প্রতিটি মসজিদে তাঁর রুহের মাগফিরাত ও শহীদী মর্যাদা কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করেছেন।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন কণ্ঠস্বর ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান তাঁকে একটি প্রজন্মের প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত করেছে। তার সহযোদ্ধাদের মতে, হাদি হারিয়ে যাননি বরং তিনি প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষের বিবেকের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
এদিকে শহীদ ওসমান হাদির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্র। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন যে, হাদির পরিবারের সকল দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে। শহীদ হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের ভরণপোষণ, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব নেবে রাষ্ট্র।
প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হাদির অকাল প্রয়াণে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়, তবে তাঁর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করাই হবে তাঁর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।