চট্টগ্রাম নগরীর টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে রাজস্ব আদায় জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং বাণিজ্যিক রাজধানী হলেও ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য খাতে রাজস্ব আদায় এখনো সম্ভাবনার তুলনায় কম। এই অবস্থার পরিবর্তনে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরও সক্রিয়, দায়িত্বশীল ও মাঠমুখী হতে হবে।
সোমবার টাইগারপাসস্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সভাকক্ষে রাজস্ব বিভাগের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সাব্বির রহমান সানি, স্টেট অফিসার অভিষেক দাশ, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভায় উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ লক্ষাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে ধারণা করা হলেও বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা দেড় লক্ষেরও কম। ফলে বিপুল পরিমাণ সম্ভাব্য রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, কর ফাঁকির প্রবণতা এবং রাজস্ব বিভাগের লজিস্টিক ও এক্সপোজার ঘাটতিকে এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ।
সভায় জানানো হয়, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ের হার ইতোমধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শপসাইন ও বিজ্ঞাপন ফি খাতে চলতি ছয় মাসেই আগের বছরগুলোর বাৎসরিক আদায়ের চেয়ে বেশি রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে, যা আগামী দিনে আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করা হয় ।
রাজস্ব আদায় জোরদার করতে লাইসেন্স ও হোল্ডিং শাখার কর কর্মকর্তা, উপকর কর্মকর্তা ও লাইসেন্স ইন্সপেক্টরদের ভেস্ট ও আইডি কার্ড প্রদান, নিয়মিত সভা, টার্গেট নির্ধারণ, প্রতিদিন মনিটরিং, সার্কেল অফিস পরিদর্শন ও মাঠপর্যায়ে ভিজিট বাড়ানো হয়েছে।
সভায় মেয়র বলেন, করদাতাদের আস্থা ফেরাতে আপিল নিষ্পত্তি গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য অনুযায়ী, আগে যেখানে প্রতিটি সার্কেলে মাসে ১–২টি আপিল বোর্ড বসত এবং উপস্থিতি ছিল ২০–৩০ জন, বর্তমানে প্রতি সার্কেলে মাসে ৫টি আপিল বোর্ড অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং প্রতিটিতে উপস্থিতি ১০০ জনের বেশি। ত্রৈমাসিক অ্যাসেসমেন্টের সময় নতুন বা সম্প্রসারিত কোনো হোল্ডিং যেন বাদ না যায়, সে বিষয়েও কড়া মনিটরিং চলছে ।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন রাজস্ব কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে। প্রথমে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব মার্কেটসহ সকল মার্কেটে সরেজমিন পরিদর্শন করতে হবে৷ ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যবসা চলতে দেওয়া যাবে না; প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে চসিকের অনুমতি ও নির্ধারিত ফি আদায় নিশ্চিত করতে হবে। কোচিং সেন্টারসহ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু অভিযোগ আছে কোচিংগুলো ট্রেড লাইসেন্স নেয়না এবং অনুমতি ছাড়া ইচ্ছামতো বিজ্ঞাপন প্রচারিত করে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করে। এবিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আমাকে প্রতিদিনের রাজস্ব আদায়ের সারসংক্ষেপ রিপোর্ট জমা দিবেন। দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় রাজস্ব আদায় আরও বাড়াতে কয়েকটি কৌশলগত করণীয় তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রতি বছর রাজস্ব সম্মেলন আয়োজন, এনবিআর, বন্দর, চেম্বার ও বড় কর্পোরেট হাউজগুলোর সাথে সমন্বয়, গণমাধ্যম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর সচেতনতামূলক প্রচারণা, সার্কেলগুলোতে পর্যাপ্ত লজিস্টিক সহায়তা, শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ, নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং ভালো কাজের জন্য কর্মচারীদের প্রণোদনা প্রদান ।মেয়র বলেন, “নগরবাসীর করের টাকাই নগরীর উন্নয়নের মূল শক্তি। সুশাসন, জবাবদিহিতা ও কার্যকর রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চট্টগ্রামকে আমরা একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ নগরীতে রূপান্তর করব।”