প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস এই নামটি শুধু বলিউড বা হলিউডে সফল নায়িকা হিসেবে নয়, বরঞ্চ গ্লোবাল ফ্যাশন আইকন হিসেবে বিশ্বে সমানভাবে স্বীকৃত। তিনি প্রতিটি বিশ্বপাঠক ও ফ্যাশনপ্রেমীর কাছে কেবল একটি সুন্দর মুখই নন, বরঞ্চ একটি স্টাইল স্টেটমেন্ট, সংস্কৃতি ও আত্মবিশ্বাসের এক আবির্ভাবিত ও নির্ভরযোগ্য প্রতীক।
প্রিয়াঙ্কা জন্মেছেন ভারতের জাম্ববাড়িয়ায়, মিস ওয়ার্ল্ড ২০০০ খেতাব জিতে তার পথচলা শুরু করেন ফ্যাশন ও বিনোদন জগতে। তার ফ্যাশন যাত্রা আজ আন্তর্জাতিক রেড কার্পেট থেকে শুরু করে ক্যাজুয়াল স্ট্রিট স্টাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।
২০০০ সালে মিস ওয়ার্ল্ড জয়ের মাধ্যমে প্রিয়াঙ্কা প্রথম বিশ্বমঞ্চে ফ্যাশন-বিশ্বে প্রবেশ করেন। তখন তার লুক ছিল প্রথাগত সৌন্দর্য, ক্লাসিকাল সিলুয়েট ও পার্ল-সিকুয়েন্সড ড্রেস যা সেই সময়ের জন্য অত্যন্ত পরিশীলিত ও আকর্ষণীয় ছিল।
বলিউডে তাঁর প্রথম কয়েক বছর ছিল সোনেটিক গ্ল্যামার উজ্জ্বল রঙ, সিল্ক বা সাটিনের পোশাক, মার্জিত মেক-আপ ও সিল্কির হেয়ারস্টাইল। এটিই ছিল তার ফ্যাশন প্লেটফর্ম, যা পরবর্তীতে আরও বিস্তৃত স্টাইলসমৃদ্ধ রূপ নেয়।
২০১০ এর দিকে প্রিয়াঙ্কার ফ্যাশন চিন্তা আরও সাহসী ও ইন্টারন্যাশনাল হয়ে ওঠে। তিনি সময়ে সময়ে লেদার মিনি, টেইলরড জ্যাকেট, বডি-কন সিলহুয়েটস–এর মতো পোশাক পরতে শুরু করেন। এই সময়ে তার সংগীত ক্যারিয়ার ও বিভিন্ন ফ্যাশন-বিকাশী ফটোগ্রাফিতে তাঁর স্টাইল যুগে যুগে বদলাতে থাকে।
এই সময়ে তিনি মেক-আপও আরও সমৃদ্ধ করেন স্মোকি আইস, নিউড লিপস ও স্টেটমেন্ট জুয়েলারি, যা পরবর্তীতে তার স্বাক্ষর-স্টাইলেই পরিণত হয়।
২০১৫ সালে Quantico সিরিজে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রিয়াঙ্কা আন্তর্জাতিক পটভূমিতে প্রবেশ করেন, এখানেই ফ্যাশনের দুনিয়াটিও তাঁকে খুঁজে পায়। শুরুর দিনগুলোতে তিনি রাস্তায় ক্যাজুয়াল স্টাইলে Versace বা couture–এর মিলন ঘটান। ধীরে ধীরে আধুনিক স্বাধীন পরিধান, রুচিনিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিত্বের অনন্য সমন্বয় তৈরি করেন।
2017 সালে তার Met Gala তে আত্মপ্রকাশ হয় একটি রালফ লরেনের ট্রেঞ্চ-কোট গাউনে, যা সে বছর ফ্যাশন দুনিয়ার সবচেয়ে আলোচিত লুকগুলোর একটি হয়েছিল। এটি শুধু তাঁর পোশাকই নয় একটি সাহসী বিবৃতি ছিল, যা তাঁকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
২০১৮ থেকে আজ পর্যন্ত প্রিয়াঙ্কার ফ্যাশন এখন যাকে বলা যায় ‘কাঠামোগত ক্ষমতার ফ্যাশন’ monochrome লুক, couture gowns, tailored suits বা bold color play সবাই তাঁর রেড কার্পেট লুকের কিছু অংশ।
তিনি আন্তর্জাতিক ডিজাইনারদের পাশাপাশি নিজের ভারতীয় ফ্যাশন-উৎসও বিশ্বমঞ্চে পরিচয় করিয়েছেন সব্যসাচী, মনিশ মালহোত্রা, তারুণ তাহিলিয়ানি, ফালগুনি শেন পিকক প্রতিটি শৈলী তিনি ভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন।
বিশেষ করে, তিনি ভারতীয় শিল্ক, বস্ত্র ও আধুনিক সিলহুয়েটকে আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের সঙ্গে মিলিয়ে এমন একটি স্টাইল তৈরি করেছেন যা ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিলিত প্রতীক।
প্রিয়াঙ্কার ফ্যাশন শুধু পোশাক নয়, এটি একটি আত্মবিশ্বাস, শক্তি ও সংস্কৃতি প্রকাশের উপায়। তিনি বলছেন, “ফ্যাশন হল সাংস্কৃতিক সংযোগের মাধ্যম”—যা বিভিন্ন পটভূমির মানুষকে এক করে দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে অন্যান্য স্টাইলিক সেলিব্রিটিদের থেকে আলাদা করে।
তিনি এমন ফ্যাশন চয়েস করেন যা তাঁর ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করে—সাহসী, আলাদা এবং সময়ের সঙ্গে অভিযোজিত। এটি তাঁর স্টাইলে শুধু স্টাইলিশ হওয়া নয়, বরঞ্চ একটি গল্প বলার ক্ষমতা আছে তার প্রতিটি লুকেই।
প্রিয়াঙ্কা শুধু ফ্যাশনেই নয়, ফ্যাশনকে চালনা করার উদ্দেশ্যেও খ্যাত। তিনি British Fashion Council–এর অ্যাম্বাসেডর ফর পজিটিভ চেঞ্জ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন; যেখানে তিনি অন্তর্ভুক্তি, ন্যায়নিষ্ঠা ও শিক্ষা-সংক্রান্ত উদ্যোগগুলোকে সমর্থন করেন।
তিনি ফ্যাশনকে সামাজিক সচেতনতার একটি মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করেন, উদাহরণস্বরূপ, টেকসই, পরিবেশবান্ধব ডিজাইনারদের পক্ষে শব্দ তৈরি করা এবং ছোট ডিজাইনারদের গ্লোবাল স্টেজে তুলে ধরা।
প্রিয়াঙ্কার ফ্যাশন মাইলফলকগুলো যেমন তার লাল শাব্যসাচী লেহেঙ্গা, শীর্ষ ফ্যাশন ইভেন্টগুলোতে couture gowns, রোমাঞ্চকর রেড–কার্পেট লুক সবই তাকে শুধুমাত্র ট্রেন্ডসেটার নয় বরঞ্চ একটি কালজয়ী আইকন করে তুলেছে।
প্রিয়াঙ্কার স্টাইলের সবচেয়ে বড় শক্তি হললোকাল কালচারকে গ্লোবাল ভাষায় রূপান্তর করা। তিনি ভারতীয় ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের সঙ্গে যুক্ত করেন, পুরনো ও নতুন স্টাইলের সংমিশ্রণে নিজস্ব বৈচিত্র্যময় স্টাইল গড়ে তোলেন।
এতে শুধু ফ্যাশন নাটকীয় হয়নি বরঞ্চ এটি একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক বার্তা পাঠিয়েছে: শৈলী কোনো সীমান্ত মানে না।
আজ প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস শুধুমাত্র এক আন্তর্জাতিক নায়িকা নন তিনি এক গ্লোবাল ফ্যাশন আইকন; যিনি নিজের স্টাইল, আত্মবিশ্বাস, ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিশ্ব ফ্যাশন মানচিত্রে এক অনন্য স্থাপনা তৈরি করেছেন। তাঁর পোশাক শুধু একটি লুক নয়, একটি গল্প, একটি পরিচয় এবং একটি প্রেরণা যা বিশ্বের কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।