দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন শুধু দেশের রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার এই ঘটনাকে ঘিরে বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যমগুলো বাংলাদেশকে নতুন করে তাদের প্রধান শিরোনামে নিয়ে এসেছে।
রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি, আল জাজিরা, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসসহ প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো একবাক্যে তারেক রহমানকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর সকাল ১১টা ৩৯ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তারেক রহমান। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান। বিমানবন্দরে পা রেখেই জুতা খুলে খালি পায়ে দেশের মাটিতে দাঁড়ানো এবং একমুঠো মাটি হাতে নেওয়ার দৃশ্য অনেকের চোখে প্রতীকী হয়ে ওঠে, যা দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর মাতৃভূমির সঙ্গে এক আবেগী পুনর্মিলন।
বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়েতে নির্ধারিত গণসংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত পুরো পথজুড়ে দেখা যায় লাখো নেতা কর্মী ও সমর্থকের ঢল। ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় পতাকা আর স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাজধানী ও আশপাশের এলাকা।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে এই খবরটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে। বিশ্বখ্যাত বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসনে থাকার পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা বিএনপির জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক গতি সঞ্চার করবে। সংস্থাটি বলেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি তারেক রহমানকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অভিহিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় তার প্রত্যাবর্তন ঘিরে যে জনসমাগম দেখা গেছে, তা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক রহমানের দেশে ফেরা রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। কাতারভিত্তিক আল জাজিরা তারেক রহমানকে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস তার প্রত্যাবর্তনকে বাংলাদেশের রাজনীতির এক নাটকীয় অধ্যায় হিসেবে বর্ণনা করে বলেছে, একসময় যিনি একাধিক মামলার মুখে নির্বাসনে ছিলেন, আজ তিনি ক্ষমতার শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজন।
উপমহাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে ভারতের দ্য হিন্দু, এনডিটিভি এবং পাকিস্তানের ডন তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে এই অঞ্চলের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখেছে। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন এবং আঞ্চলিক প্রভাবের বিষয়গুলো এসব প্রতিবেদনে গুরুত্ব পায়। পূর্বাচলের গণসংবর্ধনায় লাখো মানুষের সামনে বক্তৃতায় তারেক রহমান বলেন, দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। তিনি সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা পরিহার করে গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্যে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, বরং স্থিতিশীল ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার বার্তা ছিল স্পষ্ট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বিএনপির জন্য শুধু আবেগী মুহূর্ত নয়, এটি কৌশলগতভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি মাঠে তাঁর উপস্থিতি নেতৃত্বকে আরও দৃশ্যমান ও কার্যকর করবে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম উঠে আসা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত বহন করে।
বিশ্ব রাজনীতি ও কূটনৈতিক মহল এখন বাংলাদেশের দিকে নতুন করে নজর দিচ্ছে যে কে হবে পরবর্তী নেতৃত্ব। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি ও নির্বাচনী কৌশলই এখন ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।