সাধারণ এক গৃহবধূ থেকে হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির ‘আপসহীন নেত্রী’।
বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতির প্রায় চার দশকের এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের অবসান ঘটল।
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল এক কঠিন পরিস্থিতিতে। ১৯৮১ সালের মে মাসে স্বামী ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনীতিতে আসার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না। কিন্তু দল যখন ভাঙনের মুখে পড়ে, তখন নেতা-কর্মীদের দাবিতে ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
রাজনীতিতে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। দীর্ঘ ৯ বছর রাজপথে আপসহীন সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি স্বৈরাচার এরশাদের পতন ত্বরান্বিত করেন। এই অনমনীয় নেতৃত্বের কারণেই তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে জনমানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস গড়েন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।
সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে তার একটি অনন্য ও ঈর্ষণীয় রেকর্ড রয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং প্রতিটি আসনেই জয়লাভ করেছেন।
কোনো নির্বাচনেই তিনি কখনো পরাজিত হননি। তার শাসনামলে দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের উপবৃত্তি চালু ও অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করাসহ গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে।
তবে তার রাজনৈতিক জীবনের শেষ দশকটি ছিল কারাবাস ও অসুস্থতায় জর্জরিত। ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তাকে কারাগারে যেতে হয়। সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলেও দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিসসহ একাধিক জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি।
৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর তিনি পুরোপুরি মুক্তি পেলেও শারীরিক সংকটের কারণে আর সুস্থ হয়ে ফিরতে পারেননি। অবশেষে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় ৮০ বছর বয়সে কোটি নেতা-কর্মীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন।