সাজা ভোগের পরও কারাগারে বন্দি ১৫৭ বিদেশি : হাইকোর্টে প্রতিবেদন

সাজা ভোগের পরও কারাগারে বন্দি ১৫৭ বিদেশি : হাইকোর্টে প্রতিবেদন

সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশের বিভিন্ন কারাগারে ১৫৭ বিদেশি বন্দি আছেন বলে হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে জানিয়েছে কারা অধিদফতর।

এর মধ্যে ১৫০ জন ভারতীয়, পাঁচজন মিয়ানমারের এবং একজন করে পাকিস্তান ও নেপালের নাগরিক রয়েছে। এসব বিদেশি নাগরিকের মধ্যে ১৫৭ জন নারী আছেন।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) আদালতে এমন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কারা অধিদফতর।

সাজার মেয়াদ শেষেও দেশের কারাগারে বন্দি রয়েছেন– স¤প্রতি এমন বিদেশিদের তালিকা চান হাইকোর্ট। গত ১৫ জানুয়ারি এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের বেঞ্চ আগামী ১০ মার্চের মধ্যে কারা-মহাপরিদর্শককে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন।

ওইদিন শুনানিতে আদালত সাজা ভোগের পরও কারাবন্দি রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং আদালতের নির্দেশে গোবিন্দ উড়িয়াসহ সাজাপ্রাপ্ত বিদেশি কারাবন্দিদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা না করার নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেন।

এছাড়া বিদেশি কারাবন্দিদের সাজার মেয়াদ শেষে তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলাদা একটি বিভাগ করার নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, কারা মহাপরিদর্শক, মৌলভীবাজার জেল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

সাজা ভোগকারী বিদেশি বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে গত ১১ জানুয়ারি হাইকোর্টে এই রিট আবেদন করেন আইনজীবী বিভ‚তি তরফদার। সেখানে বলা হয়, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি ভারতের ত্রিপুরার কমলপুর থানার বাসিন্দা গোবিন্দ উড়িয়াকে আটক করে বিজিবি। সেদিনই তার নামে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা করেন বিজিবির হাবিলদার মো. রশিদ প্রধান। তদন্তের পর ওই বছরের ৪ এপ্রিল অভিযোগপত্র জমা দেন শ্রীমঙ্গল থানার এসআই কামরুল হাসান।

অভিযোগপত্র জমার দিনই ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪২ ধারা ও দি কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট, ১৯৫২ আইনের ৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন মৌলভীবাজারের চতুর্থ বিচারিক হাকিম এম. মিজবাহ উর রহমান। সেইসঙ্গে অনুপ্রবেশের দোষ স্বীকার করায় সেদিনই গোবিন্দকে ২ মাস ১০ দিনের কারাদÐ দেন বিচারক।

রায়ে বলা হয়, আসামি মামলা সংশ্লিষ্টতায় আগে হাজতবাস করে থাকলে সেই সময় সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে। সে অনুযায়ী রায় ঘোষণা পর্যন্ত গোবিন্দ উড়িয়া চার দিন বেশি হাজত বাস করেন। আসামি যেহেতু ইতোমধ্যে সাজার মেয়াদ ভোগ করে ফেলেছেন, সেজন্য তাকে ভারতে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু ওই রায়ের পর দুই বছর পার হলেও ওই ভারতীয় নাগরিক কারাগার থেকে মুক্তি পাননি জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে এ বছরের ১১ জানুয়ারি রিট আবেদন করেন আইনজীবী বিভ‚তি তরফদার।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অন্তর্র্বতী আদেশে গোবিন্দ উড়িয়াকে মুক্তি দিতে বলেছে হাইকোর্ট। তিনি বলেন, “আদালতের আদেশের পরও দুই বছর ধরে একজন বিদেশিকে তার দেশে ফেরত না পাঠিয়ে কারাবন্দি রাখা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ ও মানবাধিকার সংক্রান্ত সর্বজনীন ঘোষণার লঙ্ঘন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email