চট্টগ্রামে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ৫৪তম জশনে জুলুস শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। ঐতিহ্যবাহী এ জুলুস জনসমুদ্রের রূপ নেবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
জুলুসে নেতৃত্ব দেবেন দরবারে সিরিকটের সাজ্জাদানশিন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (ম জি আ)। অতিথি থাকবেন সাহেবজাদা হজরত সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ (ম জি আ) ও সৈয়দ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ (ম জি আ)।
তবে জুলুসে ড্রাম সেট আনা, নারীর অংশগ্রহণ এবং খাবার নিক্ষেপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ষোলশহর আলমগীর খানকায়ে কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়বিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাসূল (সা.)-এর ধরাপৃষ্ঠে শুভাগমনের ১৫০ বছর পূর্তি এবং ট্রাস্টের শতবর্ষ উপলক্ষে বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে এই জুলুস চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের অংশ। শরিয়ত সম্মত ঐতিহ্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন, জুলুসের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন ও নির্ধারিত স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
জুলুসের রোড ম্যাপ
ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা থেকে সকাল ৮টায় শুরু। এরপর বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, জিইসি ঘুরে একই পথে ফিরে জামেয়া মাদরাসার জুলুস মাঠে। সেখানে মাহফিল, জোহর নামাজ ও দেশ-জাতির সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক আমির হোসেন সোহেল, অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, তরজুমানের নির্বাহী সম্পাদক অভীক ওসমান, আবু তালেব বেলাল প্রমুখ।
পবিত্র ঈদ এ মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর)। জুলুস ঘিরে নগরজুড়ে সাজ সাজ রব, উৎসব।
শুধু নগর নয়, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এমনকি গ্রামেও চলছে প্রস্তুতি আর প্রচারণা।
আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের অন্যতম বড় এ জুলুসে নেতৃত্ব দেবেন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ)।
জুলুছে মেহমান হিসেবে থাকবেন শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা.জি.আ) ও সৈয়্যদ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ (মা.জি.আ)।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) আশেকে রাসূলদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ঢাকার জুলুস সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম আসবেন হুজুর কেবলা। বাদে মাগরিব জামেয়া মাঠে অংশ নেবেন গেয়ারবি শরিফে।
এবার জলুসের রোডম্যাপ কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। মুরাদপুরের জামেয়া মাদরাসা সংলগ্ন ষোলশহর আলমগীর খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে জুলুস শুরু হয়ে মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট দিয়ে জিইসির পেনিনসুলার সামনে ঘুরে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা মাঠে জমায়েত হবে। এখানে দেশখ্যাত আলেমরা বক্তব্য দেবেন। দেশ ও জাতির শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হবে।
আনজুমানের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বাংলানিউজকে বলেন, জুলুসের প্রস্তুতি চলছে মাসখানেক ধরে। ৫৩ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে দায়িত্ব বণ্টন করা আছে। সেভাবেই চলছে কাজ।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের সিলসিলা, তরিকতের ভাই, সুন্নি জনতা, আশেকে রাসূলরা ঐতিহ্যবাহী জশনে জলুসে অংশ নেবেন। ঢাকায় সফল জুলুস হয়েছে। অন্য বিভাগগুলো, জেলাগুলো নিজস্ব উদ্যোগে মাসব্যাপী জুলুস করবে। তারপরও প্রধান জুলুসে অংশ নিতে আশেকরা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামে আসছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, জুলুস উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন মোড়ে সুসজ্জিত তোরণ দেওয়া হয়েছে। সড়কদ্বীপ, সড়ক বিভাজকে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা, আনজুমানের পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। কাজীর দেউড়ি মোড়, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা, খানকাহ এলাকার দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা, মদুনাঘাট সেতুতে আনজুমানের পতাকা রীতিমতো ভাইরাল।
মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় রীতিমতো মিলাদ ও গরু জবাই করে ফাতেহার আয়োজন চলছে।
চট্টগ্রামে জশনে জুলুসের প্রবর্তন হয়েছে ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল। দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের (পাকিস্তান) তৎকালীন সাজ্জাদানশীন, আধ্যাত্মিক সাধক, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রা.) এ জশনে জুলুসের প্রবর্তন করেন। জুলুসের মধ্য দিয়ে প্রিয় নবীজীর প্রতি সম্মান ও বিশ্বশান্তির বার্তা দেওয়া হয়।
এবারের জুলুসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের পাশাপাশি আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের (এএসএফ) প্রশিক্ষিত সদস্য, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের কর্মী ও জামেয়ার হাজার হাজার ছাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবেন বলে জানান অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার।