দেড় মাস পর জনসম্মুখে জামায়াত আমির, কৃতজ্ঞতা জানালেন সৃষ্টিকর্তাকে

দেড় মাস পর জনসম্মুখে জামায়াত আমির, কৃতজ্ঞতা জানালেন সৃষ্টিকর্তাকে

অসুস্থতার পর প্রায় দেড় মাস পর জনসম্মুখে এসে বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি সুস্থ হয়ে আবারও জনসম্মুখে কথা বলার সুযোগ পাওয়ায় মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শুক্রবার সকালে ঢাকা-১০ আসনের কাফরুল দক্ষিণ থানা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন তিনি।

এসময় জামায়াত আমির বলেন, “দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় পর মিডিয়ার সামনে দাঁড়ানোর শক্তি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এজন্য আমি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তৌফিক না দিলে আমি আজ এখানে এসে কথা বলতে পারতাম না। এই সময়ে আমার মনে হয়েছে জাতিকে কিছু বলার দায়িত্ব আমার। সেই দায়িত্ব অন্য কেউ পালন করতে পারবে না। তাই আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি—যেন অন্তত মানুষের কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলতে পারি। আল্লাহ সেই সুযোগ দিয়েছেন।”

নিজের অসুস্থতার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সমাবেশের দিন আমি যখন মঞ্চে পড়ে যাই, তখন দেশের মানুষ টিভি ও মোবাইল স্ক্রিনে তা দেখেছিলেন। তাদের মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতালের খ্যাতিমান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মমিনুজ্জামানও ছিলেন। তিনি তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আমার সমস্যাটি মস্তিষ্কজনিত নয়, বরং হৃদ্‌যন্ত্রে হতে পারে। পরে তাঁর আহ্বানে চিকিৎসা নিই।”

তিনি জানান, তাঁর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে ২২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। তারা হৃদ্‌যন্ত্রে ব্লক শনাক্ত করেন এবং ঝুঁকি বিবেচনায় বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “চিকিৎসকরা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক কিংবা আমেরিকার মতো দেশের নাম বলেছিলেন। আমি তাদের আন্তরিক পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞ। তবে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম—আল্লাহ কি কেবল সেই দেশগুলোতেই আছেন? চিকিৎসকরা বললেন, আল্লাহ সর্বত্র আছেন। আমি বললাম, আল্লাহ যদি সেখানে আমাকে সুস্থ করতে পারেন, তবে তিনি চাইলে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশেও আমাকে সুস্থ করতে পারেন। সুস্থতা-অসুস্থতা কার হাতে—এক বাক্যে সবাই স্বীকার করেছেন, আল্লাহর হাতে। তাই আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহই আমাকে আবার জনসম্মুখে দাঁড়ানোর শক্তি দিয়েছেন।”

প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুলাই রাজধানীতে এক সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন জামায়াত আমির। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি মঞ্চে পড়ে গেলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাঁকে ধরে বসান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি আবার উঠে দাঁড়িয়ে মঞ্চে বসেই বক্তব্য চালিয়ে যান। পরে তাঁকে দ্রুত ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাঁর রক্তচাপ, গ্লুকোজ ও হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক পাওয়া যায়। মস্তিষ্কেও কোনো জটিলতা ধরা পড়েনি। সতর্কতার অংশ হিসেবে তাঁকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল।

দীর্ঘ দেড় মাস পর জনসম্মুখে ফিরে আসায় তাঁর সুস্থতা নিয়ে দলের ভেতরে স্বস্তি ফিরেছে। জামায়াত নেতাদের মতে, রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং সময়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে আবারও জনসম্মুখে পাওয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য ইতিবাচক বার্তা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email