নারীর মনোনয়ন: দলগুলোকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান নারী অধিকারকর্মীদের

নারীর মনোনয়ন: দলগুলোকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান নারী অধিকারকর্মীদের

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ও সাধারণ আসনে নারীর মনোনয়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন নারী অধিকারকর্মীরা। তাদের দাবি, নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করতে হবে এবং তাতে সরাসরি নির্বাচন চালু করতে হবে। পাশাপাশি ৩০০ আসনে নারীদের অন্তত ৩৩ শতাংশ মনোনয়ন দিতে হবে।

রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর–রুনি মিলনায়তনে ‘নারীর রাজনৈতিক ফোরাম’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, নারীর প্রত্যাশা উপেক্ষা করলে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটে বড় ঝুঁকিতে পড়বে।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষাপট

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ঠিক করা হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থাকবে এবং দলীয় মনোনয়ন ব্যবস্থাই বহাল থাকবে। আর ৩০০ আসনে প্রাথমিকভাবে মাত্র ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে, যা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে ৩৩ শতাংশে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নারী অধিকারকর্মীরা এই সিদ্ধান্তে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির বর্ধিত সভা

বক্তাদের বক্তব্য

মানবাধিকারকর্মী ফারাহ কবির বলেন, “আমরা ঢাকায় বসে নারীর কথা বলছি না; টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত প্রান্তিক নারীদের আকাঙ্ক্ষা আমরা তুলে ধরছি। তাঁরা ভোটার হিসেবেও, নেতৃত্ব দিতেও প্রস্তুত।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, “নারীরা স্পষ্টভাবে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন চাইছেন। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এই আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে, নারীরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে।”

প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, “২০২৬ সালের নির্বাচনেই সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন সম্ভব। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেই ১০০ আসনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা যাবে।”

শ্রমিকনেতা তাসলিমা আখতার বলেন, “আমাদের দুটি মূল দাবি—সংরক্ষিত আসন ১০০ করে সরাসরি নির্বাচন এবং ৩০০ আসনে নারীর জন্য ৩৩ শতাংশ মনোনয়ন। জুলাই সনদে এটি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে, যা হতাশাজনক।”

লিখিত বক্তব্য

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নারীর প্রতিনিধিত্ব প্রতীকী পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। সংসদে নারীর ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ধাপে ধাপে সেটিকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এর জন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়নে আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ জরুরি।

এছাড়া প্রস্তাব করা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে নারী প্রার্থীদের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নির্বাচনী ব্যয়ের সমপরিমাণ আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ দিতে হবে, যাতে আর্থিক প্রতিবন্ধকতায় যোগ্য নারী প্রার্থীরা পিছিয়ে না পড়েন।

কমিশনের অবস্থান

নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রস্তাব তুললেও কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে ৫ শতাংশের বেশি নারী মনোনয়ন দিতে রাজি হয়নি। এ অবস্থানকে ‘নারীর অগ্রযাত্রার প্রতি অবমাননা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ফোরামের নেত্রীরা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email