সংসদ সদস্য পদে মহিলারা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার জন্য ১০০টি সংসদীয় আসনের প্রস্তাব করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। মহিলারা কারও দয়ায় নয়, সরাসরি ভোটে জিতে সংসদে যাবে- এ মন্তব্যও করেছেন তিনি।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে জাতীয়তাবাদী মহিলাদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংস্কার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে সংস্কারের কথা হচ্ছে। সেদিন একটি দৈনিক পত্রিকার সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় আমি স্পষ্ট বলেছি, মহিলারা অত্যন্ত অবহেলিত। মহিলাদের যদি সিটি করপোরেশনে তিনজন কাউন্সিলরের বিপরীতে একজন করে কাউন্সিলর হতে পারে সরাসরি ভোটে, তাহলে অবশ্যই তিনজন এমপির সঙ্গে একজন মহিলা এমপি অবশ্যই সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে যেতে পারে। তাহলে আমরা ১০০ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য পাবো। আমি চাই, মহিলারা কারো কোনো দয়ায় নয়, তারা সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে। এতে তাদের মর্যাদা বাড়বে, সংসদে কথা বলার একটা সুযোগ তৈরি হবে।
তিনি বলেন, আমরা জানি, আট কোটি মানুষের জন্য ছিল ৩০০টি সংসদীয় আসন। এখন প্রায় ১৮ কোটি মানুষ হয়ে গেছে, এখনও সংসদীয় আসন ৩০০টা। আমি বলছি, মহিলাদের জন্য যদি ১০০টা সংসদীয় আসন করা যায়, আমাদের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমান ৩১ দফায় বলেছেন যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা, সেখানে উচ্চকক্ষ থাকবে, উচ্চকক্ষে দেশের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ, পেশাজীবীদের আমরা স্থান দিতে পারবো। তাহলে দেখা যাবে, পুরো সংসদে একটা ব্যালেন্স হবে এবং তাতে করে পুরো মতামত সেখানে প্রতিফলিত হবে৷
দেশ গড়তে মহিলাদের কথা শুনতে হবে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতনের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই নতুন বাংলাদেশে আমাদের ভাবতে হবে মহিলারা কী চায়, আমাদের ঘরে আমাদের মায়েরা কী চায়, সবার কথা আমাদের শুনতে হবে। রাজনীতিটা হচ্ছে মানুষের জন্য, মানুষের উন্নয়নের জন্য, শুধু নিজের উন্নয়নের জন্য নয়।
আমি মহিলা দলের নেত্রীদের বলব, আপনারা মানুষের পাশে দাঁড়ান, গরীব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের পাশে, অসহায় মহিলাদের পাশে দাঁড়ান। আপনারা তারেক রহমানের ৩১ দফা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিন। এই ৩১ দফাই আগামীর বাংলাদেশ গড়ার মূল সনদ। এটা যদি আমরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি, তাহলে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ধানের শীষ ইনশাল্লাহ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে বিএনপি এদেশে সরকার গঠন করবে।
চাঁদাবাজদের দলে জায়গা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের গঠনমুলক রাজনীতি করতে হবে। চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী, যারা জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থানের পরে দলে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। তাদের কোনোভাবে পাত্তা দেওয়া যাবে না, কোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া যাবে না। আমরা ১৬-১৭ বছর ধরে রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কিন্তু যারা ৫ আগস্টের পরে এসেছে বা আসবে, ভেবেছে এখন অনেক হালুয়া রুটি পাওয়া যাবে, সেগুলো খাবে, তাদের কোনোভাবেই পাত্তা দেওয়া যাবে না। তারা আমাদের ত্যাগী নেতাকর্মীদের পেছনে থাকবে, কোনোভাবেই সামনের সারিতে আসতে পারবে না।
আমরা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন টুয়েন্টি থার্টি আর তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে এগিয়ে যাব, ইনশাল্লাহ আমাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
এতে প্রধান বক্তার বক্তব্যে আবুল হাশেম বক্কর বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নারী সমাজের উন্নয়নে মহিলাদলকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই দলের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের নারী সমাজকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মহিলাদল দেশ, দেশের মানুষের উন্নয়ন, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর মহিলাদলের সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনির সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফাতেমা কাজলের পরিচালনায় এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। বিশেষ অতিথি ছিলেন দক্ষিন জেলা মহিলা দলের সভাপতি জান্নাতুল নাঈম রিকু। বক্তব্য রাখেন মহানগর মহিলা দলের সিনিয়র সহ সভাপতি সকিনা বেগম, সহ সভাপতি সাহিদা বেগম মালা, মারিয়া সেলিম, রেজিয়া বেগম মুন্নি, রেনুকা বেগম, জুলেখা বেগম জুলি, যুগ্ম সম্পাদক রোকেয়া বেগম রাকু, সামছুন নাহার প্রেমা, সায়রা বেগম, কামরুন নেছা, মনোয়ারা বাবুল, রোখসানা বেগম মাধু, কোষাধক্ষ নাছিমা আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবা সুলতানা, আসমা বেগম, ফরিদা আকতার, থানা কমিটির নেত্রী আলতাজ বেগম, বৃষ্টি আকতার, সুলতানা বেগম, নাজমা বেগম, শামছুন নাহার, সানজিদা ইসলাম প্রমুখ।