সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘জুলাই বিপ্লবের পূর্বাপর: বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি’ শীর্ষক এক সেমিনার আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদ কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। সেমিনারে কীনোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাহরাইনে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী।
এছাড়া সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন চবি সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এ.কে.এম. মাহফুজুল হক (মাহফুজ পারভেজ) এবং ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. তওফীকুর রহমান তারেক। রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও অতীশ দিপংকর শ্রীজ্ঞান হলের প্রভোস্ট এ. জি. এম. নিয়াজ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. এনায়েত উল্ল্যা পাটওয়ারী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চবির উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, আমাদের বাংলাদেশ ভূখন্ডে যতগুলো বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তার সুফল যথাযথভাবে এদেশের মানুষ পায়নি। ৭১ পরবর্তীতে যেমন কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, ৯০ পরবর্তীতেও হয়নি। এরপর ২৪ পরবর্তী আমরা সুন্দর একটি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার দৃশ্যমান বাস্তবতা আমরা এখনো দেখছি না। এটার কারণ উদঘাটন করতে হবে। আমাদের ছাত্রসমাজকে আন্তর্জাতিক মানের নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। একটি টেকসই বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের সবাইকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, জুলাই বিপ্লবকে সঠিকভাবে ধারণ করে দেশে একটি গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামো তৈরি করতে হবে। এ বিপ্লবে ছাত্র, শ্রমিক, কুলি, মজুরসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। প্রত্যাশা ছিল বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন করা। দেশকে সংস্কার ও নতুনভাবে পুনরায় সকল কাঠামো মেরামত করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য। এ ঐক্যকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে কীনোট স্পিকারের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাহরাইনে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে খুবই নিষ্ঠুরতার সঙ্গে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এদেশে ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামো তৈরি করেছে। তার দমন নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে এদেশের সর্বস্তরের মানুষ। গেল বছরের আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নির্লজ্জভাবে দেশ থেকে বিদায় নেয় শেখ হাসিনা। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, দেশের সর্বস্তরের মানুষ এক দুঃখের সাগর পার করেছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের এ প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বলতে চাই, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য বিশ্বের অন্যান্য গণঅভ্যুত্থানের চেয়ে ভিন্ন। এ গণ-অভ্যুত্থানের ম্যান্ডেটকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপক চবির সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে পাখির মতো হাসিনা গুলি করে হত্যা করেছে। তাই আমাদেরকে এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যেন এদেশে কেউ আর হাসিনা হয়ে উঠতে না পারে। তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলছেন সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে বাস্তবে সংস্কার হলো খেলার নীতিমালার মতো। অর্থাৎ খেলার আগে যেমন খেলার নীতিমালা তৈরি করতে হয়, তেমনি দেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালনার নীতিমালা প্রণয়ন হলো সংস্কার। হাসিনার আমলে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। ফলে আমরা চাই না আরেকটা সরকার এসে এমন লুটেরা সংস্কৃতি তৈরি করুক। আমরা সম্পদ লুটের এই ব্যবস্থা তৈরি হতে দিতে চাই না। আমাদের অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে। তবে নির্বাচনের আগে দেশের যথাযথভাবে সংস্কার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপক রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. এ. কে. এম মাহফুজুল হক (মাহফুজ পারভেজ) বলেন, অনেকেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করেছে। তবে কেউ কেউ সুবিধাবাদী চিন্তা থেকে নিজেকে জুলাই বিপ্লবের ভ্যানগার্ড হিসেবে হাজির করে। দেশকে সঠিক রাস্তায় সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে জুলাইয়ের মূল্যবোধকে ধারণ করতে হবে। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. তওফিকুর রহমান তারেক।
স্বাগত বক্তব্যে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. এনায়েত উল্ল্যা পাটওয়ারী বলেন, জুলাই বিপ্লবের মূল্যবোধ ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। জুলাই বিপ্লবের মূল্যবোধ ধারণ করে এ দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতিকে নির্ধারণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চবি আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ তালুকদার, মেরিন সায়েন্সস এন্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. শাহাদাত হোসেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমদ, চাকসু কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. ভূঁইয়া মো. মনোয়ার কবীর, প্রফেসর ড. আনোয়ারা বেগম, ছাত্রছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক ড. আনোয়ার হোসেন ও নবাব ফয়জুন্নেসা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. এস. এম. রফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। সেমিনারে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রবন্ধ উপস্থাপকগণ।