বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুমাম কাদের চৌধুরী বলেছেন, "আমি ওয়াদা করছি, জিয়া পরিবার রাঙ্গুনিয়ার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দেবে তা মাথা পেতে নেবো। দলের পক্ষ থেকে যাকেই মনোনয়ন দেবে তাকেই আমরা মেনে নেবো। আশাকরি বাকী যারা নমিনেশন চাচ্ছে, তারাও যেনো একই ধরণের ওয়াদা করেন। কারণ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্যকে সংসদে পাঠাতে হবে, এই লক্ষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।"
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইত্যাদি চত্বরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কতৃক উপস্থাপিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে বিশাল জনসভায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগের মোকাবেলা করার জন্য আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এখনো আওয়ামী লীগ বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে, এখনো তারা বসে বসে ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আমাদের কিছু নেতাকর্মীরাও পা দিয়ে দিচ্ছে। জাতীয়তাবাদী দলকে দুর্বল করার জন্য তারা গ্রুপিং সৃষ্টি করছে। কিন্তু আপনারা যদি বেগম জিয়া, তারেক রহমানকে ভালবেসে থাকেন এবং জিয়া পরিবারকে বিশ্বাস করে থাকেন, তবে জিয়া পরিবার যেই সিদ্ধান্ত দেবে তা মেনে নিতে হবে।"
সরফভাটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ওসমান গণির সভাপতিত্বে এবং আবদুল করিম চৌধুরী, দিদারুল আলম ও দেলোয়ার হোসেনের যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক শওকত আলী নূর, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এ্যাডভোকেট কামাল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক নিজামুল হক চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক হাজী ইলিয়াস সিকদার, হেলাল উদ্দিন শাহ, একতিয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি ইউসুফ চৌধুরী, ভিপি আনছুর উদ্দিন, মাকসুদুল হক চৌধুরী, পারভেজ মোশাররফ, ফারুকুল ইসলাম, আবুল হোসেন চৌধুরী, ইফাক, সহিদুল ইসলাম, তাহনিয়া মোর্শেদ তোহা, আবু বক্কর, হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সরফভাটা ইউনিয়ন থেকে বিএনপি নেতা মো. আইয়ুর, সৈয়দ নূর, রফিকুল ইসলাম, নুরুল আবছার মেম্বার, আবদুল মান্নান, এস এম ইফতেখার রুবেল, সেকান্দার হোসেন, ফরিদুল আবছার, এমরান, নাহিদুল ইসলাম, সাদ্দাম ও সিয়ামসহ জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
হুমাম কাদের চৌধুরী আরও বলেন, "১৬ বছর ধরে জীবিত থাকার জন্য আওয়ামী লীগকে চাঁদা দিতে হয়েছে। কিন্তু দু:খের বিষয় দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়ার পরও এখনো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নাম ভাঙিয়ে এখনো আপনাদের চাঁদা দিয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু তারেক রহমান সাহেবের ঘোষণা দলের নাম ভাঙিয়ে যারা এই ধরণের কাজ করবে, তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তিনি দুবার ভাবেন না। কেউ যদি চাঁদা দাবী করছে প্রমাণ পায়, তাকে সেই মুহুর্তেই বহিস্কার করা হচ্ছে।"
আয়নাঘরে থেকে সম্মানিত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বাংলাদেশের সকল মানুষের দল হচ্ছে বিএনপি। আমাকে যখন এই দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়, তখন আমি আয়নাঘরে ছিলাম। এই সম্মান আমাকে তারেক রহমান দিয়েছেন। এই দায়িত্ব সম্মানের সাথে পালন করার চেষ্টা করছি। তাই গ্রুপিংয়ের রাজনীতি করে এই দলকে দুর্বল করবেন না। তাই দয়া করে এই গ্রুপিং করবেন না। এই দল বাংলাদেশের সকল মানুষের দল।"
আওয়ামী লীগকে ক্ষমা চাইতে হবে জানিয়ে হুমাম কাদের চৌধুরী বলেন, ৩১ দফা যদি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে আমাদের যে মন বড়, আমরা যে মাফ করতে পারি, তার প্রমাণ আমাদেরকে দিতে হবে। যারা যারা আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে আসার চেষ্টা করছে, তাদের নিয়ে আপনারা হাসি ঠাট্টা করে অনেক কিছু বলেন, হাইব্রিড বলেন। আমাদের মুসলমান হিসেবে দায়িত্ব মাফ করা। তবে যারা আগে আওয়ামীলীগ করে এখন বিএনপি করতে চান, তাদের না করবো না। তবে আসার আগে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যেই অত্যাচার আপনারা করেছেন বিএনপি নেতাদের উপর, তার জন্য আগে ক্ষমা চাইতে হবে।
সারা বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীদের উপর মামলা হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হলেও রাঙ্গুনিয়াতে হয়নি। কারণ আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শে রাজনীতি করি। তিনি কখনো এই ধরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এই গ্রুপিংয়ের রাজনীতি করবেন না। আমরা যারা যারা বিএনপি করি, আমরা সবাই এক পরিবার।"
বাবা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "৭৯ সালের এক বক্তব্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলে গিয়েছেন, তার জন্ম রাউজানে হলেও রাঙ্গুনিয়ায় যেনো তার মাঠি দেয়া হয়। আব্বার সাথে শেষ বারের মতো দেখা করার সময়ও তিনি আমাদের বলেছেন, রাঙ্গুনিয়ায় যেনো তার কবর দেয়া হয়। তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলো, রাঙ্গুনিয়ার সাথে তার কি সম্পর্ক ছিলো। তিনি রাঙ্গুনিয়ার আপামর জনসাধারণের নেতা ছিলেন, রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য ছিলেন। রাঙ্গুনিয়া থেকে তিনি মন্ত্রী ছিলেন। রাঙ্গুনিয়ার মানুষ তাকে আপন করেছিলেন এবং নিজেদের সন্তান মনে করতেন। আমার দুঃখের সময় আপনাদের সহায়তা চেয়ে কখনো নিরাশ হয়নি। এখনো আপনারা আমার পাশে আছেন। তাই রাঙ্গুনিয়ার মানুষকে কখনো পিঠ দেখাবো না।"