
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা:এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন,‘অনেকে অনেক কথা বলেন,কেউ বলছেন- পি আর ছাড়া না কি জাতীয় নির্বাচন হবে না এবং স্বৈরাচার না কি পিআর পদ্ধতিতে না হলে শাসক স্বৈরাচারী হয়ে যায়। আমাদের জানতে ইচ্ছা করে যে,বাংলাদেশের সংবিধানে কোথাও কি স্বৈরাচার হওয়ার কথা কী লেখা ছিল? কিন্তু সংবিধানের তো কোনো দোষ নেই,দোষ হচ্ছে,যারা দিনের ভোট রাতে করেছেন। যারা বিনা ভোটে নির্বাচন করেছেন। যারা আমি ডামি নির্বাচন করেছেন। জনগণকে দেশের মালিক মনে না করে খালি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য আর প্রশাসন আর বিচার মন্ত্রনালয়ের কিছু সংখ্যক মানুষকে কব্জা করে দেশ শাসন করার চেষ্ঠা করেছেন। দেশটাকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করার চেষ্ঠা করেছেন, দোষ তো তাদের? দোষ তো সংবিধানের নয়? সংবিধানে তো ভাল ভাল কথা লিখা ছিল।
জাহিদ বলেন-‘সংবিধান তো স্বৈরাচার হতে বলে নাই কিন্তু যারা এটিকে ব্যবহার করেছেন,গণমানুষের অধিকারকে যারা তোয়াক্কা করেন নাই। জনগণের ভোটের যাদের কোন প্রয়োজন পড়ে নাই। সেই মানুষগুলি নিজেরা কতৃত্ববাদী হয়েছেন এবং স্বৈরাচার হিসাবে নিজেদেরকে আর্ভিভূত করেছেন। কাজেই আজকে স্বৈরাচারকে যদি রুখতে হয় তাহলে আমাদের রাজনৈতিক যে মানসিকতা রাজনৈতিক যে কালচার সেটার মধ্যে পরিবর্তন করতে হবে। এবং নিজের আমিত্ব থেকে বের হতে হবে।
জাহিদ আরও বলেন- এই পিআর পদ্ধতি পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশ অনেক আছে, যেমন গ্রেট বৃটেন কোথায় সেদেশে কি আপনার পি আর এর প্রাকটিস হয়? পাশ্বর্বতী দেশ ইন্ডিয়ায় শুধু দক্ষিণ ইন্ডিয়ায় অনেক প্রদেশ আছে এর মধ্যে মাত্র তিনটি প্রদেশে পি আর প্রাকটিস করে। তাও নিম্ন কক্ষে করে না। ভারত একটি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে তারা তো করে না? তাই আজকে যারা পি আর পদ্ধতি চান,খুব ভালো কথা। তাহলে জনগণের কাছে যান জনগণকে বোঝান জনগণ যদি মেনে নেয় আলহামদুলিল্লাহ। জনগণ যেটি রায় দিবে সবাই মেনে নিবে। সেই অনুযায়ী হবে। কিন্তু বর্তমানে আপনারা(জামায়াতসহ অন্যান্যদল যারা পি আর চায়) যে ভাবে আলোচনা চলা অবস্থায় ,যখন আলোচনা চলছে। ঐক্যমত কমিশন আপনাদের সাথে কথা বলছে। আমরা দেখছি পত্র পত্রিকায়। আপনারা সেই সময় রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়ে মাঠে ডুবে গেলেন । আপনারা এটি কি বুঝাতে চান ? আপনারা কী সংঘাতের দিকে যেতে চান? আপনারা কী জনগণের মতামতকে কী গুরুত্ব দিতে চান না? আপনারা কী আলোচনার টেবিলকে অবিশ্বাস করতে চান? না কি আপনারা অন্য কিছু চান? আপনার কি নির্বাচনটা পিছিয়ে যাক সেটি চান? আজকে তেরো মাসের জায়গায় চৌদ্দ মাস শুরু হয়েছে। চৌদ্দ মাসেও এই দেশে জাতীয় নির্বাচন মধ্য ফেব্রুয়ারী হবে কি হবে না সেইটা নিয়ে মানুষের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। আর পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ওই দেশ থেকে শিক্ষা নেন। যেইদিন তাদের শপথ নিয়েছে সেইদিনই বলে দিয়েছে আগামী ২৬ মার্চ তাদের জাতীয় নির্বাচন হবে। তারা যদি নিতে পারে তাদের যদি রাজনৈতিক দৃঢ়তা বা দক্ষতা তাদের যদি দূরদর্শীতা এরকম থাকে তাহলে আজকে চৌদ্দ মাস পরে বাংলাদেশে কেনও এরকম পরিস্থিতিতি সৃষ্টি হয়েছে। কেন আলাচনার টেবিল থেকে হঠাৎ করে রাজপথে যাওয়ার প্রয়োজন হলো। এ থেকে আপনারা কি র্বাতা দিতে চান। আপনাদের চেক রেকর্ড আপনারা কি দেখেছেন? আপনারা অতীতে বাংলাদেশের সংসদে কতগুলো সীট নিয়ে কয়জন কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জনগণ আপনাদেরকে কীভাবে নির্বাচিত করেছিল। দায় দায়িত্ব দিয়েছিল। আপনারা কী এরকম দায়িত্বশীল হয়েছিলেন। তাহলে আপনারা কিভাবে কথায় কথায় বলেন এদেশের সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ পি আর চায়? সেটা মানতে হবে। আরে ভাই, সংখ্যা গরিস্ট সংখ্যা লগিষ্ট প্রশ্নতো পরে,আগে নিজেরা বলেন সংসদের দরজা দিয়ে অনেকেই আছেন যারা এসব নিয়ে কথা বলছেন সংসদে জীবনে কখনো জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে ছিলেন না। কাজেই এসব কথা না বলে আগামী নির্বাচনকে আশঙ্কাজনকভাবে আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারীর পরবর্তীতে চলে যায় এইরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে এবং স্বৈরাচারের ক্রীড়ানক হয়ে বাংলাদেশে দয়া করে স্বৈরাচারের ফেরত আসার পথ কে সুগম করবেন না। মনে রাখবেন, জাতীয় ঐক্য যেটি ৫ই আগস্ট ৩৬ জুলাই ২০২৪ দেখিয়েছে সারা দেশের মানুষ। সকল ছাত্র জনতার সাথে সকল রাজনৈতিকদল যারা গনতন্ত্রকে ভালবাসে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজনীতির মাঠে ছিল তারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। আজকে এমনকি ঘটনা ঘটল যে টেবিল থেকে আপনাদেরকে লাফ দিয়ে রাজপথে চলে যেতে হলো। কেন আজকে এই অনৈক্য। এই অনৈক্য থেকে যদি বের হয়ে না আসতে পারেন আর সেই ফাঁক দিয়ে যদি স্বৈরাচার ঢুকে যায় এর দায় দায়িত্ব জাতি একদিন এরজন্য আপনাদের দায়ী করবে। মনে রাখতে হবে দয়া করে স্বৈরাচার ফেরত আসার পথকে সুগম করবেন না’।
শনিবার(২০)সেপ্টেম্বর বিকেলে মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির দ্বি বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা: জাহিদ আরও বলেন- ‘বিএনপি সংস্কারের সাথে চলে অর্থাৎ বিএনপির জন্মই হয়েছে, দেশের মানুষের আশা আকাংখা কে ধারণ করা,লালন করা তার সাথে সংগতি রেখে দেশের অগ্রগতি উন্নয়নকে অব্যাহত রাখার জন্য সব সময় নিজেকে পরিবর্তন এবং নীতিকে একটি মাত্র লক্ষ্য অর্থাৎ জনগণের উন্নয়নের জন্য যতধরনের সংস্কার প্রয়োজন এর প্রত্যেকটাই বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দল সবসময় করেছে। কাজেই বিএনপি সংস্কার চায় না সংস্কার বিশ্বাস করে না এ সমস্ত কথা যারা বলে তারা আয়নায় নিজেদের চেহেরা দেখেনা। এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগনের ভোট সঠিকভাবে দেওয়ার জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা সেটাও তো বিএনপিই করেছে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তৎকালীন সরকার। এবং নারীদের শিক্ষার জন্য বিনা বেতনে বই দেয়া,শিক্ষার জন্য উপ বৃত্তি দেয়া এসমস্ত উদ্যোগ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সরকার গ্রহণ করেছে। এই যারা মুক্তিযুদ্ধাদের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলতো এই মুক্তি যোদ্ধাদের জন্য যা কিছুৃ কাজ শুরু করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে করা। আজকে মহিলা ও শিশু,যুব বিষয়ক মন্ত্রনালয় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্যারের আমলে করা। অর্থাৎ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষকে সংঘবদ্ধ করার দায়িত্ব পালন করেছেন শহীদ জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’।
মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ মমশাদ আহমদের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো.আব্দুর রহিম রিপনের পরিচালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন জি কে গউছ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দীকি,বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান,সম্মেলনের উদ্বোধক জেলা বিএনপির আহবায়ক মো.ফয়জুল করিম ময়ূন। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ভিপি মিজানুর রহমান,জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল মুকিত। আরো অতিথি ছিলেন পৌর বিএনপি সম্মেলন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. ফখরুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার মুজিবুর রহমান মজনু, আবুল কালাম বেলাল। সম্মেলনে জেলা ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনের শুরু হওয়ার আগে জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দকে নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
এদিকে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে বিকেল চারটারদিকে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিল অধিবেশনে গোপন ব্যালটে নেতৃত্ব নির্বাচিত করার জন্য পৌর বিএনপির সভাপতি,সিনিয়র সহ সভাপতি, সম্পাদক, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোট ১৬ জন প্রার্থী অংশ নেন। মৌলভীবাজার পৌরসভার মোট নয়টি ওয়ার্ডে ৬৩৯জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার উৎসবমূখর পরিবেশে প্রয়োগ করছেন। দীর্ঘ দিন পর গোপন ব্যালটে গনতান্ত্রিক পরিবেশে বিএনপির আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচিত করার দায়িত্ব পাওয়াতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উৎসবমূখর পরিবেশে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ভোট দিচ্ছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ শেষে গণনা চলছে।







