পৃথিবী ভরপুর সৌন্দর্যে। নীল আকাশ, সবুজ বনানী, পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী, চাঁদ-সূর্য-তারকা— প্রতিটি দৃশ্য মহান স্রষ্টার মহিমার প্রমাণ বহন করে।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে করেছেন সৃষ্টির সেরা জীব, জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে পৃথিবীর সবকিছু মানুষের জন্য সুসজ্জিত করেছেন। তবুও আজ মানুষ আল্লাহর হুকুম ভুলে যাচ্ছে, দুনিয়ার মোহে মগ্ন হয়ে পড়ছে। ধন-সম্পদ, ক্ষমতা, দালান-কোঠা, পদমর্যাদা — এগুলোকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মনে করছে।
অথচ আল্লাহ বলেন, “এ দুনিয়ার জীবন তো ক্রীড়া ও খেলা ছাড়া কিছু নয়। আর পরকালই প্রকৃত জীবন, যদি তোমরা জান।” (সুরা আনকাবুত: ৬৪)
দুনিয়ার ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী, আল্লাহর ক্ষমতা চিরন্তন
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একসময়ের পরাক্রমশালী রাজা-বাদশাহ আজ কেবল ইতিহাসের পাতায় নাম মাত্র। তাদের প্রাসাদ আজ ধ্বংসস্তূপ। দুনিয়ার ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর ক্ষমতা চিরস্থায়ী। আল্লাহ সতর্ক করেছেন, “তোমরা যেখানে থাকো, মৃত্যু তোমাদেরকে পৌঁছে যাবে, যদিও তোমরা শক্তিশালী দুর্গে অবস্থান কর।” (সুরা নিসা: ৭৮)
যে ক্ষমতা মানুষকে অন্যায়ের পথে ঠেলে দেয়, তা প্রকৃতপক্ষে ধ্বংস ডেকে আনে। প্রকৃত জয় হলো আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া অন্তরে ধারণ করা।
আল্লাহর ভয় মুক্তির একমাত্র পথ
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “দুনিয়া কারাগার মুমিনের জন্য এবং জান্নাত কাফেরের জন্য।” (সহিহ মুসলিম) অতএব দুনিয়ার বিলাসিতা, অহংকার, ভোগ-বিলাস চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। আল্লাহর ভয় হৃদয়ে না থাকলে মানুষ সীমা লঙ্ঘন করে। সমাজে অন্যায়, দুর্নীতি, হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। পরকালের শাস্তি অনিবার্য হয়ে ওঠে।
নবী-রাসূলদের লক্ষ্য আল্লাহর পথে ডাকা
সমস্ত নবী-রাসূলের মূল দাওয়াত ছিল এক আল্লাহর ইবাদত করো, শিরক থেকে দূরে থাকো। হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন মানুষকে তাওহিদের দিকে আহ্বান করতে। মক্কায় তিনি ও তাঁর সাহাবিরা কুরাইশদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ সহ্য করেছেন, তবুও হাল ছাড়েননি।
তিনি বলেছেন, “আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তাকে আঁকড়ে ধর, তবে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না – আল্লাহর কিতাব (কোরআন) এবং আমার সুন্নাত।” (মুয়াত্তা মালিক)
আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার পরিণতি
আজ আমাদের সমাজে অন্যায়, দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ বেড়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণ মানুষ আল্লাহকে ভুলে যাচ্ছে। আল্লাহর হুকুম উপেক্ষা করে দুনিয়ার ক্ষমতাকে বড় মনে করা হচ্ছে। অথচ পরকালের বিচার দিবস নিশ্চিত। আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালোবাসে এবং পরকালকে ভুলে যায়, আমি তাকে দুনিয়ার সামান্য অংশ দেই, কিন্তু তার কোনো অংশ থাকবে না আখেরাতে।” (সুরা শুরা: ২০)। যে সমাজে আল্লাহর হুকুম মানা হয় না, সেখানে শান্তি থাকে না। অন্যায় বেড়ে যায়, মানবিকতা নষ্ট হয়।
মানুষকে সচেতন করার আহ্বান
আল্লাহভীরু সমাজ গঠন: শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কোরআন শিক্ষা, নামাজ শিক্ষা দিতে হবে।
সুন্নাতের অনুসরণ: নবী করিম (সা.)-এর জীবনকে আদর্শ বানাতে হবে।
দুনিয়ার মোহ ত্যাগ: হারাম উপার্জন, সুদ, ঘুষ থেকে বাঁচতে হবে।
পরকালের প্রস্তুতি: প্রতিদিন নিজের আমল মূল্যায়ন করতে হবে, তওবা করতে হবে। পরকালের চিন্তা না থাকলে মানুষ বেপরোয়া হয়
যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে না যে তার প্রতিটি কাজের হিসাব হবে, সে সহজেই অন্যায়ে লিপ্ত হয়। কিন্তু মুমিন জানে, তার প্রতিটি কাজের জন্য কিয়ামতের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে।
আল্লাহ বলেন, “যে পরিমাণ পরমাণু পরিমাণ সৎকাজ করবে, সে তা দেখবে। আর যে পরিমাণ পরমাণু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে, সে তা দেখবে।” (সুরা যিলযাল: ৭-৮)
প্রকৃত বিজয়–আল্লাহর সন্তুষ্টি
দুনিয়ার ক্ষমতা, অর্থ, প্রভাব একদিন শেষ হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহকে রাজি রাখতে পেরেছে, তার প্রকৃত জয় হয়েছে। আল্লাহ তাআলা জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেইসব ঈমানদারদের জন্য যারা আল্লাহকে ভয় করে, তাকওয়াপূর্ণ জীবন যাপন করে।
আল্লাহ তাআলা এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর হুকুম ছাড়া কিছুই চলবে না। আল্লাহকে ভুলে গেলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ—সবাই ধ্বংসের মুখে পড়বে। তাই আল্লাহর হুকুম অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। দুনিয়ার ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি চিরস্থায়ী। আসুন আমরা সবাই আল্লাহর আদেশ মানি, নবী-রাসূলের সুন্নাত আঁকড়ে ধরি এবং আল্লাহভীরু সমাজ গড়ে তুলি।