শুভ জন্মদিন, আপা।’ গতকাল রাত ৯টার দিকে সাকিব আল হাসান ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে তাকে গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। আর ছবির ক্যাপশনে লেখা ওপরের প্রথম বাক্যটি।
এরপর রাত ১০টার দিকে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। বাট আই ওয়াজ রাইট। এন্ড অব দ্য ডিসকাশন।’ সেই একজনটা কে, ক্রীড়া উপদেষ্টা উল্লেখ করেননি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা সক্রিয়, তাদের ধারণা আসিফ মাহমুদের ইঙ্গিতটা সাকিব আল হাসানের দিকে।
সাকিব এরপর বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে নিজের ফেসবুকে পাল্টা আরেক পোস্টে লিখেছেন, ‘যাক শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তাঁর জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না! ফিরব হয়তো কোনো দিন আপন মাতৃভূমিতে, ভালোবাসি বাংলাদেশ।’
সাকিব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার এই ভার্চুয়াল যুদ্ধে এবার যোগ দিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি সাকিবকে সরাসরি ইঙ্গিত করে দীর্ঘ এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
নিচে শফিকুল আলমের স্ট্যাটাসটি দেওয়া হলো:
শুধু “আপা” শব্দটি বদলে “গণহত্যাকারী” লিখলেই সাকিব আল হাসানের বার্তা দাঁড়ায়: “শুভ জন্মদিন, গণহত্যাকারী।” দেশের একজন শীর্ষ ক্রীড়াবিদ এমন একজনকে শুভেচ্ছা জানালেন, যিনি শিশু-কিশোরসহ হাজারো মানুষের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযুক্ত-এটি সত্যিই লজ্জাজনক।
সন্দেশ স্পষ্ট: শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় ফেরে, তবে সাকিবও সেই রক্তমাখা শাসনে নামতে প্রস্তুত। অতীতের মতোই সুযোগ নিয়ে সুবিধা ভোগের পথ খুঁজবেন তিনি-যেমন অভিযোগ আছে, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি থেকেও তিনি লাভবান হয়েছেন।
বিশ্ব দেখেছে, রাজনীতি কিভাবে ক্রীড়াবিদদের ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছে। ব্যারি রিচার্ডস, এডি বার্লো, গ্রায়েম পোলক-সবাই হারিয়েছেন তাদের প্রাপ্য স্থান, কারণ তারা প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের। আজ সাকিবও দাঁড়িয়ে গেছেন একই ধরণের এক স্বৈরশাসনের পাশে-শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা।
অভিযোগ আছে, সাকিবের বাবা নিজেও ছিলেন হাসিনার কথিত ‘লাল বাহিনী’র অংশ। আর আজ সাকিব নিজে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন: যতই প্রমাণ জমা হোক, তিনি এই শাসনের সাথেই থাকবেন।
ন্যায়ভিত্তিক বিশ্বে এ ধরনের অবস্থান-গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত একজনকে প্রকাশ্যে সমর্থন করা-জনসমক্ষে কলঙ্ক ও আলোচ্য মঞ্চ থেকে নির্বাসনের কারণ হতো। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তথাকথিত বড় বড় গণমাধ্যম অনেক সময় গণহত্যাকেও গণহত্যা বলতে দ্বিধা করে। সেলিব্রিটিরা দাঁড়িয়ে যান এমন শাসনের পাশে-ভয়, মুনাফা বা সুযোগসন্ধানী হিসাবের কারণে।
একজন গণহত্যাকারীকে প্রকাশ্যে উদযাপন মানেই দর্শক হয়ে থাকা নয়-বরং হয়ে ওঠা সেই হত্যাযন্ত্রেরই অংশ।