অনশনে ফ্লোটিলার বন্দি অভিযাত্রীরা

অনশনে ফ্লোটিলার বন্দি অভিযাত্রীরা
ইসরাইলে আটক গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনের অভিযাত্রীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) জানায়, নৌবাহিনীর অবৈধ আটক ও মানবিক সহায়তা গাজায় পৌঁছাতে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি নিয়েছেন অভিযাত্রীরা।

গত ৩১ আগস্ট স্পেনের একটি বন্দর থেকে গাজার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল ৪৩টি নৌযান। খাদ্য ও ওষুধবাহী বহরে ছিলেন সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ও রাজনীতিক মান্ডলা ম্যান্ডেলাসহ ৪৪টি দেশের প্রায় ৫০০ জন অধিকারকর্মী। তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী এবং রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী ছিলেন। কিন্তু গাজার উপকূলে পৌঁছানোর আগেই একটি ব্যতীত সব নৌযান আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। আটক হন শত শত কর্মী। প্রথম বহর আটক হলেও ফ্লোটিলা জোট হাল ছাড়েনি।

গত বৃহস্পতিবার এফএফসি নতুন করে আরও ১১টি নৌযান গাজার উদ্দেশে পাঠানোর ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ইতালি ও ফ্রান্সের পতাকাবাহী দুটি জাহাজ ২৫ সেপ্টেম্বর ইতালির আটরান্টো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর আরও ৯টি নৌযান যোগ হয়। প্রায় ১০০ জন মানবিক সহায়তাকর্মী ও ক্রু আছেন নতুন বহরে।

বাংলাদেশ থেকেও অংশ নিয়েছেন খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম।

গতকাল শুক্রবার ফেসবুক লাইভে তিনি জানান, তাদের বহর এখন ফিলিস্তিনি টাইম জোনে প্রবেশ করেছে। তাদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা রয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার ভোরে ফ্লোটিলার শেষ নৌযান ‘দ্য ম্যারিনেট’ আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। পোল্যান্ডের পতাকা বহনকারী এই নৌযানে ছয়জন ক্রু ছিলেন।

লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক জলসীমায় প্রবেশের সময় ইসরায়েলি নৌসেনারা জাহাজে ঢুকে নিয়ন্ত্রণ নেয়। আটক হওয়ার পরপরই কয়েকজন কর্মী অনশন শুরু করেন।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন গ্রেটা থুনবার্গ, বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আদা কলাউ, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসানসহ আরও অনেকে। তাদের সবাইকে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ সরকার এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক জলসীমায় গাজার মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা বহনকারী জাহাজ আটক আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ।

বাংলাদেশ সরকার আটক মানবিক কর্মীদের দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানায় এবং ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করে অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানায়। এত বড় আকারের মানবিক নৌবহর এর আগে কখনো গাজায় যায়নি। ফলে এ ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ তৈরি করেছে।

আন্তর্জাতিক ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন বলেছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় মানবিক কাজে নিয়োজিত জাহাজ আটক করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েলের কর্মকা্লের প্রতিবাদে তার দেশ থেকে ইসরায়েলি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হবে এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করা হবে।

ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, স্পেন, গ্রিস ও আয়ারল্যান্ড ইসরায়েলকে আটক কর্মীদের মুক্তি ও তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

তবে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেসকা আলবানিজে বলেছেন, এটি মূলত “অবৈধ অপহরণ।”

২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েল গাজার ওপর নৌ অবরোধ জারি রেখেছে। তাদের দাবি, অস্ত্র পাচার ঠেকাতে এই অবরোধ প্রয়োজন।

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই অবরোধ আসলে গাজার জনগণকে ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে ঠেলে দিচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামাস হামলার পর ইসরাইলি বাহিনী দুই বছর ধরে গাজায় টানা অভিযান চালাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘ বলছে, উপত্যকার কিছু অংশে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে। খাদ্য ও ওষুধের প্রবেশ সীমিত হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে অসহনীয়। ফ্লোটিলা উদ্যোগের লক্ষ্যই হলো এই অবরোধ ভেঙে মানবিক সহায়তা গাজায় পৌঁছে দেয়া। আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত এই মিশন ফিলিস্তিনের মানুষের দুর্দশা তুলে ধরার চেষ্টা করছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email