আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এ দিবস পালন করবে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার ও বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। শিক্ষক সমাজের নিকট এ দিনটি গুরুত্ব বহন করে। আজকের এ দিনে শিক্ষক সমাজের প্রতি যতটুকু শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কথা ছিল তার বিপরীত মেরুতে শিক্ষকের দিনকাল অতিবাহিত করতে হচ্ছে। ইদানীং দেশের পরিবেশ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি লাঞ্ছিত, অপমানিত ও অপদস্তের শিকার শিক্ষক সমাজ। স্বাভাবিক জীবন যাপনের অনিশ্চিতায় দিনের শুরু করতে হয়। প্রতিটি কর্মের আর্থিক ও সমাজিক জৌলুশ বাড়লেও শিক্ষক সমাজ অনিশ্চিতার দোলায় দুলছে। আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অঙ্গিকার হোক নানা ষড়যন্ত্রের ডালপালা ভেঙে আর্থিক সচ্ছলতা, সম্মানের মহিমায় মহিমান্বিত হবে শিক্ষক সমাজ।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে এটি পালিত হয়ে আসছে। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়।
২০০৩সালে ১৯জানুয়ারি বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে তৎকালীন সরকার (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি) এ দিবসটি চালু করে। বর্তমানে জাতীয় শিক্ষক দিবসের পরিবর্তে প্রতি বছরের ৫ অক্টোবর 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস' পালিত হচ্ছে।
অনেক দেশ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসের সাথে একত্রে তাদের শিক্ষক দিবস উদযাপন করে, যা ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
বিশ্বব্যাপী ৫ অক্টোবর সংঘটন প্রতি বছর সম্পর্কিত শিক্ষক দিবস বিশ্বের ১০০টি দেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
শিক্ষক দিবসের মূল তাৎপর্য হলো শিক্ষা ও উন্নয়নে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানো। এই দিনটি শিক্ষকদের ত্যাগ, নিষ্ঠা এবং নিঃস্বার্থ সেবাকে সম্মান করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে। বিশ্বজুড়ে শিক্ষক দিবস একটি নির্দিষ্ট দিনে পালিত হয়, যেখানে শিক্ষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।
শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য:
শিক্ষকদের সম্মান ও স্বীকৃতি: এটি শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি বিশেষ দিন।
শিক্ষকদের অবদান উদযাপন: শিক্ষা ও সমাজ গঠনে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই দিনটি পালন করা হয়।
শিক্ষকদের মানসিকতা বৃদ্ধি: এটি শিক্ষকদের ত্যাগের মহিমা এবং সমাজে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা: শিক্ষক দিবস শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং তাদের কাছ থেকে শেখার গুরুত্ব বোঝাতে সাহায্য করে।সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষক দিবস সমাজের নিরক্ষরতা, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূরীকরণে শিক্ষকদের ভূমিকাকে তুলে ধরে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়, যা শিক্ষকদের বৈশ্বিক গুরুত্ব তুলে ধরে। সুতরাং, শিক্ষক দিবস কেবল শিক্ষকদের সম্মান জানানোর দিনই নয়, বরং এটি শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষকদের অপরিহার্য ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।
শিক্ষক দিবস কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
শিক্ষক দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধা কৃষ্ণণের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে, যিনি একজন দার্শনিক ও শিক্ষক ছিলেন। তাঁর সম্মানার্থে তাঁর ছাত্ররা তাঁর জন্মদিন (৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮) উদযাপন করতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি ব্যক্তিগতভাবে জন্মদিন পালনের পরিবর্তে এই দিনটি সকল শিক্ষকের প্রতি উৎসর্গ করার পরামর্শ দেন। তাঁর এই পরামর্শের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১৯৬২ সাল থেকে ভারতে ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট
ব্যক্তিগত অনুরোধ: ১৯৪৮ সালে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ভারতের রাষ্ট্রপতি হন। তখন তাঁর ছাত্র ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন উদযাপন করতে চেয়েছিলেন।
শিক্ষকদের প্রতি সম্মান: ডঃ রাধাকৃষ্ণণ তাঁদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন যে তাঁর জন্মদিন উদযাপনের পরিবর্তে সমগ্র দেশের শিক্ষকদের সম্মানার্থে একটি দিন উৎসর্গ করা উচিত।
শিক্ষকতার গুরুত্ব: তিনি বিশ্বাস করতেন যে দেশের সত্যিকারের ভিত্তি গড়ে তোলেন শিক্ষকরা। তাই, তিনি শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে শিক্ষক দিবস পালনের প্রস্তাব দেন।
গুরুত্ব ও তাৎপর্য : শিক্ষক দিবস একটি বিশেষ দিন যা শিক্ষকতা পেশার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এই দিনটি শিক্ষকদের সম্মান জানাতে, তাঁদের অমূল্য অবদানকে স্মরণ করতে এবং তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য পালন করা হয।
কাজী সরোয়ার খান মনজু
সভাপতি
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম অঞ্চল।