৫ আগষ্ট ২৪ ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দেশে অধিকাংশ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে পরিবর্তন এলেও রিহ্যাব চট্টগ্রাম রিজিওন বহাল তবিয়তে চলছে আওয়ামী আশীর্বাদপুষ্টদের হাতে।চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান হাজি দেলোয়ার হোসেন শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই যুক্ত নন, তিনি সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি বিএনপি–জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলার নেপথ্য কারিগর হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ২০২৪ সালে সাতকানিয়া থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এই দেলোয়ার সম্প্রতি ঢাকার একটি আদালতে ৮ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২১ লাখ টাকা জরিমানার সাজা পেয়েছেন। তবুও তিনি নির্বিঘ্নে রিহ্যাবের শীর্ষ পদে বহাল রয়েছেন। শুধু তাই নয়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সিডিএ চেয়ারম্যান, চসিক মেয়র—সব জায়গায় বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন দেলোয়ার। বিগত এক বছরে অন্তত ২০টি বৈঠকে তার উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আওয়ামী শাসনামলে রিহ্যাব চট্টগ্রাম কার্যত আওয়ামী লীগের ‘শাখা সংগঠন’ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে কোনো নির্বাচন ছাড়াই আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা রিহ্যাবকে দখলে রেখেছিল। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত তথাকথিত নির্বাচনে আবারও আওয়ামীপন্থিদের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে। ওই নির্বাচনে বিএনপি বা আওয়ামীবিরোধী ব্যবসায়ীরা অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি। নির্বাচনের নামে সাজানো নাটক করে পুরো কমিটিকে আওয়ামী সমর্থিত ব্যক্তিদের দিয়ে গঠন করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পরও রিহ্যাব চট্টগ্রামের নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং আওয়ামী আশীর্বাদপুষ্ট নেতারা নানা কৌশলে রঙ বদল করে বহাল তবিয়তে রাজত্ব করছেন।
সংগঠনের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মামলার আসামি ও সাজাপ্রাপ্ত হয়েও পদে বহাল থাকায় ক্ষোভ বাড়ছে সদস্যদের মধ্যে। রিহ্যাব পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. মনজুরুল ফরহাদ বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে রিহ্যাবের রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান পদে থাকার সুযোগ নেই। প্রমাণ থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তবে সংগঠনের সচিব বানার্ড বাবুল প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট বা ডিরেক্টরের ব্যক্তিগত মামলার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। অফিস চালানোই আমার দায়িত্ব। অভিযোগ থাকলে সেন্ট্রাল কমিটির সাথে কথা বলতে হবে।
রিহ্যাবের একাধিক সদস্য অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী ঘনিষ্ঠ এই নেতৃত্ব আবাসন খাতের প্রকৃত স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ। বরং নিজেদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সংগঠনকে ব্যবহার করছে। এক সদস্য বলেন, আবাসন খাত দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই নেতৃত্ব শুধু আওয়ামী দোসরদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। ফলে খাতটি গভীর সংকটে পড়েছে।
আবাসন ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, যদি দ্রুত অযোগ্য ও স্বৈরাচার–আশীর্বাদপুষ্ট নেতৃত্বকে অপসারণ না করা হয়, তবে আবাসন খাত আরও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। প্রশ্ন উঠছে, যখন শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে আওয়ামী ঘনিষ্ঠরা একে একে সরে গেছেন, তখন রিহ্যাবে তারা বহাল থাকছেন কীভাবে? অনেকের মতে, আওয়ামী আমলে অবৈধভাবে সুবিধা নেয়া ব্যবসায়ীরা এখন রাজনৈতিক রঙ বদলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছেন। তারা বিভিন্ন সংস্থায় ধরনা দিয়ে ‘নতুন প্রভাবশালী মহলের’ সাথেও যোগাযোগ করছেন।
রিহ্যাবের এক জ্যেষ্ঠ সদস্য বলেন, দেশ নতুন করে গড়ার সময় চলছে। এই মুহূর্তে স্বৈরাচারের দোসরদের হাতে আবাসন খাতকে ছেড়ে দিলে অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। আমাদের প্রয়োজন ত্যাগী ও সৎ নেতৃত্ব। যারা শুধু রাজনীতি নয়, ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করতে জানেন।
চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান হাজি দেলোয়ার হোসেন এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।