আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি আর কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি জনপ্রতিনিধি হয়ে থাকলেও সেই পদে থাকার যোগ্যতাও হারাবেন।
আইসিটি আইনের সংশোধিত নতুন ধারায় এ বিধান যুক্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে করে রাজনীতিতে শেখ হাসিনার ফেরার পথ বন্ধ হতে যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সোমবার রাতে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (তৃতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে এ সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়।
এর ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ব্যক্তিরা আর রাষ্ট্রীয় কোনো দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের মামলায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথও বন্ধ হয়ে গেল।
১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে নতুন ‘ধারা ২০-সি’ যুক্ত করা হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে, আইসিটি আইনে কারও বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠিত হলে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, কমিশনার, মেয়র বা প্রশাসক পদে নির্বাচন করার বা বহাল থাকার জন্য অযোগ্য হবেন।
এ ছাড়া প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি অযোগ্য বিবেচিত হবেন। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ থেকে খালাস পেলে তাঁর ওপর এই অযোগ্যতা আর প্রযোজ্য হবে না।
সংশোধনী অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেন, “যুদ্ধাপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত কেউ বিচারাধীন অবস্থায় রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকতে পারেন না—এটাই আইন সংশোধনের মূল উদ্দেশ্য।”
উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর এই সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করে।
যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল, সেই ট্রাইব্যুনালই এখন সেই সরকারের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে ‘গণহত্যা ও দমনপীড়নের’ অভিযোগে বিচার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি মামলার বিচার এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।