পরিবেশ সংরক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমাজে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিতে এশিয়ান নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশন আয়োজিত 'এশিয়ান গ্রীণ এ্যাওয়ার্ড ২০২৫' মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
মেয়র প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি ক্লিন, গ্রিন, হেলদি ও সেফটি সিটি গড়ে তোলা। আমরা ইতোমধ্যে ‘দশ লাখ চারা গাছ লাগানো কর্মসূচি’ হাতে নিয়েছি এবং ৪১টি ওয়ার্ডে সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও এনজিওদেরও এ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছ যেমন আমাদের থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন দেয়, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও গাছ রোপণ একটি সদকায়ে জারিয়া। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তৃণলতা ও বৃক্ষাদি আল্লাহর সেজদায় অবনত থাকে।
মেয়র আরো বলেন, অনেক দেশে অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, আমাদের দেশেও এ বিষয়ে কঠোর আইন প্রয়োজন। নির্বিচারে গাছ ও পাহাড় কেটে ফেলার ফলে প্রকৃতি আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ধস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ তারই ফল। তাই পরিবেশবান্ধব নগর গঠনে নো প্লাস্টিক নো পলিথিন নীতি অনুসরণ করতে হবে এবং ময়লা আবর্জনাগুলো ওয়েস্ট টু এনার্জি প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস বা সার উৎপাদন ব্যবস্থা অপরিহার্য। আমরা কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি, যাতে ময়লাকে সম্পদে পরিণত করা যায়।
নারী ও শিশু অধিকারের প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আমাদের সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে। আমি প্রস্তাব করেছি, বর্তমান ৩০০ আসনের সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ আসন যোগ করে সেগুলোতে নারীরা সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।
তিনি জানান, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে টাইফয়েড ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পাশাপাশি এইচপিভি ভ্যাকসিন মেয়ে শিশুদের জন্য এবং রেবিস ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ে মেয়র বলেন, অক্টোবর মাসকে “ব্রেস্ট ক্যানন্সার সচেতনতা মাস” হিসেবে পালন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন এলাকা আমরা ‘পিংক সিটি’ হিসেবে সাজিয়েছি, যাতে সবাই সচেতন হয়। বিভিন্ন হাসপাতাল বিনামূল্যে পরামর্শ ও ৫০% ছাড়ে পরীক্ষার সুযোগ দিচ্ছে। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের সুপারিশে কিছু রোগীকে বিনামূল্যে সার্জারিও দেওয়া হচ্ছে।
শেষে তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে চট্টগ্রামকে একটি ক্লিন, গ্রিন, হেলদি ও সেফটি সিটি গড়ে তুলব, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
পরিশেষে চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলা থেকে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ্যাওয়ার্ড তুলে দেন ডা. শাহাদাত হোসেন সহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান লায়ন এম জাফর উল্লাহ। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব মোহাম্মদ আলী। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সাবরিন সুলতানা, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ এস কে খোদা তোতন, হাজী মো. হানিফ সওদাগর, মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, মাই টিভি চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান নুরুল কবির, সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান রোটারিয়ান এস এম আজিজ, ভাইস চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার আরফান চৌধুরী আপেল, এডভোকেট বরকত উল্লাহ খান, ফ্রেশ এন্ড সেইফের চেয়ারম্যান আরএসএম নিজাম উদ্দিন, এন নাহার এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হুদা খান, আমাদের আলোকিত সমাজের চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম, এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার আবুল হাসনাত, সাংবাদিক মুনীর চৌধুরী, আনসারুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব ও অনুষ্ঠান পরিচালনা কমিটির আহবায়ক উৎপল কুমার দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও অনুষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো. ফয়জুল আলম প্রিন্স, মো. ফরিদ গাজী, আব্দুল লতিফ আহমেদ, নুর মুহাম্মদ চৌধুরী প্রমূখ।