দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ই অক্টোবর। চাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এবারের নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের আস্থায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল।
সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। বিএনপি তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কখনো হল দখলের ইতিহাস নেই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আপসহীন সংগঠনটি আওয়ামী শাসনামলে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে গেলেই নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছে। তবে অন্যান্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন যেমন ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ১৭ বছর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারলেও গোপনে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছে। ক্যাম্পাসটিতে বিগত সময়ে একাধিক সহিংসতা ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে চবিকে তারা রূপান্তর করেছিল শিবিরের ক্যান্টনমেন্টে। ১৯৯৪ সালের ৬ নভেম্বর শিবির কর্তৃক নির্মমভাবে নিহত হন তৎকালীন চবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হুদা মুছা। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সোচ্চার থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সর্বাধিক নির্যাতনের শিকার, গুম-খুন, মামলা-হমলার শিকার সংগঠনটির সদস্যরা কোনদিনও পিছপা হননি তাদের আদর্শ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীর রক্তের দাগ লাগেনি সংগঠনটির গায়ে।
সপ্তম চাকসু নির্বাচনে দখলদারিত্বের রাজনীতি মুক্ত শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলটি এবারের চাকসু নির্বাচনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা সংগঠনটির নির্বাচনী ইশতেহার ইতোমধ্যেই সারা ফেলেছে। বৈষম্যহীন নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনে ছাত্রদলের মনোনীত প্রার্থীরাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।
২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখই এবারের চাকসুতে ছাত্রদলের মনোনীত প্রার্থী। মনোনীতদের মধ্যে শীর্ষ তিন প্রার্থীরের মধ্যে ভিপি পদে প্রার্থিতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। ক্যাম্পাসের এই জনপ্রিয় মুখ ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ছাত্রনেতা’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালে তিনি ছাত্রলীগের হাতে নির্মম পাশবিকতার শিকার হন। তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় তৎকালীন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই ছাত্রনেতাই আজ শিক্ষার্থীদের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রদলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয় তিনি দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গা গড়ে তুলেছে যে ছাত্রদল, সেটা একদিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ছাত্রদল কাজ করেছে। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবিতে ছাত্রদল ডান-বাম নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে গুপ্ত হামলা ও স্থানীয় হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। যেসব শিক্ষার্থী আর্থিক সংকটে পড়ে পড়ালেখা বন্ধের মুখে পড়েছিল, ছাত্রদল তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ক্যাম্পেইন করেছি, স্মারকলিপি দিয়েছি এবং বিভিন্ন শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছি। তিনি আরও বলেন, অতীতে সংকটের সময় ছাত্রদল যেভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল, শিক্ষার্থীরা তা মনে রেখেছে। তাই তারা ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলকে ভোট দিয়ে আবারও কাজ করার সুযোগ করে দেবে।
এ বিষয়ে চাকসুতে ছাত্রদল মনোনীত জিএস প্রার্থী মোঃ শাফায়াত হোসেন দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে বলেন, বিগত দিনের ইতিহাস এবং দুঃসময়ে ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল এবং ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও প্রত্যেকটি যৌক্তিক আন্দোলনে ও যৌক্তিক দাবিতে ছাত্রদল সম্মুখ সাড়িতে ছিল যার কারনে শিক্ষার্থীরা আস্থা রেখেছে। ছাত্রদল কখনো ক্যাম্পাসে জুলুমের রাজনীতি করে নাই আমরা মজলুমদের পাশেই ছিলাম। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ছাত্রদল প্রশাসনের বিরুদ্ধেও একাধিকবার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এরকম অসংখ্য কাজের জন্য ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছে।
এ বিষয়ে চাকসুতে ছাত্রদল মনোনীত এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে বলেন, আমরা দল-মতের ঊর্ধ্বে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম সবসময়। প্রথম বর্ষ থেকেই ক্যাম্পাসে যে অন্যায় অবিচার হয়েছিল এগুলার পাশে আমি আমার সংগঠনে আদর্শ থেকে দাঁড়িয়েছি এবং সকল যৌক্তিক আন্দোলনে শুধু দলীয় পক্ষ থেকে নয় আমি ব্যক্তিগতভাবেও শিক্ষার্থীর পাশে ছিলাম। একজন ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কিংবা একজন ছাত্র হিসেবে শিক্ষার্থীদের সাথে যে এই মিশে থাকা এটাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলেছে। আমাদের চিন্তা এবং শিক্ষার্থীদের চিন্তার মধ্য কোন পার্থক্য নেই। তিনি আরও বলেন, আমার সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ছাত্রদের জন্য রাজনীতি করে ছাত্রদের মতামত বা তাদের যে সেন্টিমেন্ট সেটাকে লক্ষ রেখে রাজনীতি করে। আর যতদিন আমি চাকসুর প্রতিনিধি ততদিন আমি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সেই জায়গা থেকে আমার কাছে সবার আগে শিক্ষার্থী। আমার সংগঠন যদি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয় আমি তার সমালোচনা করব এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবো। আমার পক্ষ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ।