ব্যবসায়ী শিল্পপতিসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের চরম আপত্তি এবং বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোর সারচার্জ ঘোষণার মধ্যে আজ মধ্যরাত থেকে কার্যকর হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ। বন্দর ব্যবহারকারীরা বর্ধিত ট্যারিফ অন্তত এক বছরের জন্য স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারির পর এক মাস স্থগিত রাখে।এক মাসের স্থগিতাদেশ শেষে কার্যকর হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ। মঙ্গলবার মধ্যরাত ১২টার পর থেকে বন্দরে আগত সব জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গো বিল নতুন হারে আদায় করা হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ গড়ে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করার কথা বললেও ব্যবহারকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ট্যারিফ ৪শ’ গুণও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ও হিসাবরক্ষণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত নোটিশে জানানো হয়েছে, ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত ট্যারিফ কার্যকর হবে। বন্দরের তালিকাভুক্ত সব শিপিং এজেন্টকে তফসিলি ব্যাংকে নতুন হারে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রেখে আসা জাহাজের ছাড়পত্র (এনওসি) নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বন্দরের মোট ৫২টি সেবাখাতের মধ্যে ২৩টিতে সরাসরি নতুন ট্যারিফ প্রযোজ্য হচ্ছে। গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এই ট্যারিফ।বিশেষ করে কন্টেনার হ্যান্ডলিং খাতে সবচেয়ে বেশি মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ২০ ফুটি কন্টেনারের ট্যারিফ ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা, যা আগে ছিল ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা অর্থাৎ গড়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি। আমদানি কন্টেনারে ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কন্টেনারে ৩ হাজার ৪৫ টাকা বেশি দিতে হবে।প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভাড়া, টোল, ফি ও মাশুল ডলারের বিনিময়মূল্যের ভিত্তিতে আদায় করা হবে। প্রতি ডলারের হার ধরা হয়েছে ১২২ টাকা, ফলে ডলারের মান বাড়লে ট্যারিফও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে।
প্রসঙ্গত, ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ নিয়ে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আপত্তি থাকায় নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার নির্দেশে তা এক মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়। একমাস মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১৩ অক্টোবর দিবাগত রাত থেকেই নতুন হারে ট্যারিফ কার্যকর করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বর্ধিত ট্যারিফ এখনই আদায় না করে অন্ততঃ এক বছর সময় দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ী শিল্পপতিসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা। গত রোববার চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের একটি বড় সমাবেশ থেকেও এখন বর্ধিত ট্যারিফ আদায় না করার দাবি জানানো হয়। অপরদিকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি রপ্তানির সাথে জড়িত বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলো সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ফ্রান্সভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি সিএমএ সিজিএম এবং সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক শিপিং কোম্পানি এমএসসি বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহনের উপর সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
হুট করে এতো বিপুল পরিমানে ট্যারিফ বৃদ্ধি দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, শিপিং কোম্পানিগুলো যে সারচার্জ আরোপ করছে তার যোগান দেশের সাধারণ ভোক্তাদেরই দিতে হবে। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আমরা ট্যারিফ বৃদ্ধির বিরোধীতা করছি না। তবে একসাথে এতো বিপুল ট্যারিফ না বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম। যাতে একটি সহনীয় অবস্থা থাকে। এখনকার ট্যারিফ হার ‘অসহনীয়’ বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন, আমরা এক বছর সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই সময় না দিয়ে ট্যারিফ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। অবশ্য চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, একমাস স্থগিত থাকার পর মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ট্যারিফ কার্যকর হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যয় সামলানোর জন্য ট্যারিফ বাড়াতে বাধ্য হয়েছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
এ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, 'অপারেশনাল ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়নের ব্যয় সামাল দিতে ট্যারিফ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।