এ ছাড়াও রয়েছে ‘দ্রোহ পর্ষদ’, ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’, ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’সহ বাম, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট।
নারী শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি এবারের নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রায় ১১ হাজার ছাত্রী ভোটার হিসেবে অংশ নিচ্ছেন, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় নজিরবিহীন। বিশ্লেষকদের মতে, এই বড় অংশের ভোটগ্রহণ সামগ্রিক ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
নির্বাচনকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। দায়িত্ব পালন করছেন ১ হাজার ২০০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ক্যাম্পাসে রাখা হয়েছে এলইডি স্ক্রিন, যেখানে সরাসরি ভোটের পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্নতা যেন না ঘটে, সেজন্য রাখা হয়েছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা। শহর থেকে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে ১৫টি অতিরিক্ত বাস ও ১১ জোড়া শাটল ট্রেন।
চাকসু নির্বাচন উপলক্ষে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচারে সরব ছিলেন প্রার্থীরা। শাটল ট্রেন, আবাসিক হল, একাডেমিক ভবন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে চলে তাদের প্রচার। পুরো ক্যাম্পাস ছেয়ে গেছে লিফলেট, পোস্টার আর ইশতেহারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গণতান্ত্রিক চর্চায় সক্রিয় অংশগ্রহণের আগ্রহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে চাকসুর প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। এরপর ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১ ও সর্বশেষ ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। দীর্ঘ বিরতির কারণ হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতারা বলছেন, নব্বইয়ের পর সরকারগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে নিজেদের ছাত্রসংগঠনের একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করতে চেয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার স্থগিত থেকেছে দীর্ঘদিন।
নির্বাচন বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি রূপ নেয় ‘ছাত্রশাসনে’। আশির দশকে ছাত্রশিবিরের ব্যাপক প্রভাব থাকলেও, পরে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তারা এ আধিপত্য কোনোরকমে ধরে রাখতে পারে। পরবর্তী এক দশকে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে নেয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। তারা নিজেরাই বিভক্ত হয়ে একাধিক গ্রুপে বিভাজিত হয়ে হল নিয়ন্ত্রণ, আসন বণ্টন, চাঁদাবাজি ও অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
১৯৯৭ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং ও কোন্দলের জেরে এসব ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারান সংস্কৃত বিভাগের ছাত্র তাপস সরকার।
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর দেশে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হয়। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন শেষে আগামীকাল (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন।
চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এবার যাদের নির্বাচিত করবেন, তাদের হাতেই উঠবে নেতৃত্বের ভার। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, এই নতুন নেতৃত্ব দীর্ঘদিনের সমস্যা যেমন: আবাসন সংকট, নিম্নমানের খাবার, পরিবহন সংকট, সহাবস্থান সংকটসহ বাস্তব বিষয়গুলো সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।