
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় শুরু হয় গণনা ও ফল ঘোষণার কাজ। ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্র ও হলের ভোটের চিত্রে স্পষ্ট হয় যে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিপরীতে ছাত্রদল বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে এগিয়ে থেকেছে। বিশেষত সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে একাধিক হলে ছাত্রদল প্রার্থী বিজয় অর্জন করেছে।
চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল কেন্দ্রে ১৫৪ ভোটারের মধ্যে ১২৪ জন ভোট দেন। এখানে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় ৩৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন, যেখানে শিবির–সমর্থিত ইব্রাহীম হোসেন পান ২৭ ভোট এবং ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলের ধ্রুব বড়ুয়া পান ২৬ ভোট। জিএস পদে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’-এর সুদর্শন চাকমা ২৯ ভোটে এগিয়ে থাকলেও এজিএস পদে ছাত্রদলের আয়ুবুর রহমান ৩৮ ভোট পেয়ে শীর্ষে ছিলেন।
মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ভিপি পদে ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন ১৪১ ভোট পেয়ে শিবিরের ইব্রাহীম হোসেনের (১৩০ ভোট) চেয়ে এগিয়ে যান। এ হলে এজিএস পদেও ছাত্রদলের আয়ুবুর রহমান তৌফিক ১৭০ ভোট পেয়ে শিবিরের সাজ্জাদ হোসেন মুন্নাকে (৬৫ ভোট) পরাজিত করেন।
অতীশ দীপঙ্কর হলে ভিপি পদে ২২৩ ভোট পেয়ে ছাত্রদল–সমর্থিত সাজ্জাদ হোসেন স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। একই হলে জিএস পদে শাফায়াত হোসেন ১৬৪ ভোট পেয়ে শিবিরের প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিবের (৮৩ ভোট) চেয়ে এগিয়ে যান। এজিএস পদে ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান ২৬৬ ভোট পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন, যেখানে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের জাকিরুল ইসলাম পান ৫৭ ভোট এবং ফেডারেশন সমর্থিত পলাশ দে পান ৬২ ভোট।
সোহরাওয়ার্দী হলে ভোট পড়েছে ৪ হাজার ৩৪টি। এখানে ভিপি পদে শিবিরের প্রার্থী ইব্রাহীম হোসেন ১ হাজার ৪৮৮ ভোট পেলেও ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন ৬৮০ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন। জিএস পদে শিবিরের সাঈদ বিন হাবিব ১ হাজার ৪০৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে থাকলেও এজিএস পদে ছাত্রদলের আয়ুবুর রহমান তৌফিক ৯৬৮ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের সাজ্জাদ হোসেন মুন্না পেয়েছেন ৯০৬ ভোট।
নবাব ফয়জুন্নেসা হলে ভিপি পদে ছাত্রদলের সাজ্জাদ হৃদয় ২৯১ ভোট পেয়ে শিবিরের ইব্রাহীম হোসেন রনিকে (২১২ ভোট) পরাজিত করেন। এজিএস পদেও ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ৩৪৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন, যেখানে শিবিরের সাজ্জাদ মুন্না পান ১৩১ ভোট।
শামসুন নাহার হলে এজিএস পদে ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ৩৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, যেখানে শিবিরের সাজ্জাদ মুন্না পান ৩০৪ ভোট। যদিও ভিপি পদে শিবিরের ইব্রাহীম হোসেন রনি ৪৯৬ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়া হলে ছাত্রদলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক ৫৩৬ ভোট পেয়ে এজিএস পদে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের সাজ্জাদ হোসেন মুন্না পেয়েছেন ৩৭৬ ভোট।
এ এফ রহমান হলে এজিএস পদে ছাত্রদল–সমর্থিত প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান ৪৪২ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তাঁর নিকটতম শিবির প্রার্থী সাজ্জাদ হোছন পান ২৩১ ভোট।
আলাওল হলে ছাত্রদলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান ৪৭১ ভোট পেয়ে এজিএস পদে শিবিরের সাজ্জাদ হোছনকে (২২৫ ভোট) পরাজিত করেন। যদিও একই হলে ভিপি ও জিএস দুই পদেই শিবিরের প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন।
শাহজালাল হলে ভিপি ও জিএস পদে শিবির প্রার্থীরা এগিয়ে থাকলেও ছাত্রদলের আইয়ুবুর রহমান ৫৭৯ ভোট পেয়ে এজিএস পদে লড়াইয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া কেন্দ্রে ছাত্রদল এজিএস পদে জয় পায়। সেখানে আইয়ুবুর রহমান ১ হাজার ৪৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন, যেখানে শিবিরের সাজ্জাদ হোছন পান ১ হাজার ২৩৯ ভোট।
মোট ফলাফলে দেখা যায়, ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থীরা অন্তত নয়টি কেন্দ্র ও হলে ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। বিশেষত সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আইয়ুবুর রহমান তৌফিক একাধিক হলে জয় পেয়ে দলীয় প্যানেলকে শক্ত অবস্থানে এনেছেন। চারুকলা, সূর্যসেন, দীপঙ্কর, সোহরাওয়ার্দী, ফয়জুন্নেসা, শামসুন নাহার, বেগম খালেদা জিয়া, এ এফ রহমান, আলাওল ও কলা অনুষদ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন হলে ছাত্রদল ভোট পেয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছে।