আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলমের গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১০৫টি কোম্পানির ৫১৩ কোটি ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৮ হাজার ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৫০ টাকা।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২০ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ সাব্বির ফয়েজ এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। দুদকের উপ-পরিচালক তাহসিন মুনাবিল হক এ নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন।
অবরুদ্ধের আবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সত্তা ও সত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধান করার জন্য একটি যৌথ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে কোম্পানিগুলোতে অর্জিত শেয়ারের মালিকানা হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান নিষ্পত্তির পূর্বে এসব সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীতে উক্ত টাকা উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। সেজন্য, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ১০ ও ১৪ ধারা ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭-এর ১৮ ধারার কোম্পানিগুলোর শেয়ার অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।
এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ ও পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
তার আগে ৯ জুলাই এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সত্তা ও সত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ৫৩ ব্যাংকের হিসেব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ব্যাংকের হিসাবে ১১৩ কোটি ৯ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৮ টাকা রয়েছে।
গত ২৪ জুন সাইপ্রাসের লিমাসল জেলায় অবস্থিত সাইফুল আলমের (এস আলম) একটি দুইতলা বাড়ি, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে হ্যাজেক ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেডে তাদের বিনিয়োগকৃত ৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং পিকক প্রপার্টি হোল্ডিংসসহ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে আরও ১৮টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া জার্সি ট্রাস্ট কোম্পানির অধীনে ছয়টি ট্রাস্টে থাকা বিভিন্ন অঙ্কের বিনিয়োগও জব্দের আদেশ দেওয়া হয়।
তার আগে গত ২৩ এপ্রিল তার ৪০৭ কোটি টাকা মূল্যের ১৫৯ একর জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ১৭ এপ্রিল এস আলমের এক হাজার ৩৬০ টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে দুই হাজার ৬১৯ কোটি সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা রয়েছে। গত ১০ মার্চ এস আলমের এক হাজার ছয় বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। ৯ এপ্রিল তার ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একইদিন আদালত তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের ৮ হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। গত ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন একই আদালত।
গত ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।