চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো জিয়াউদ্দিন বলেছেন, টাইফয়েড টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও গুজব প্রতিরোধে গণমাধ্যমকর্মীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে ,যাতে নির্ভয়ে ৯ মাস বয়স থেকে ১৫ বছরের সকল শিশু নির্ভয়ে টাইফয়েড টিকা নিতে পারে।
কমিশনার আজ (শুক্রবার) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট কতৃক আয়োজিত মিডিয়াকর্মীদের অংশগ্রহণে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন -২০২৫ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ।
কমিশনার বলেন, সরকার টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫ এর আওতায় শিশুদের বিনামূল্যে এই টিকা প্রদান করছে। এই টিকাদান কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সুশৃঙ্খল রাষ্ট্র নির্মাণ, সুশৃঙ্খল জনসংখ্যা এবং সুস্থ পরিবার গড়া। এই সুস্থতার অংশ হচ্ছে টাইফয়েড রোগ থেকে মুক্ত হওয়া।

কমিশনার আরো বলেন, বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করে এই টিকা তৈরি করেছেন। আগে টাইফয়েডে আক্রান্ত যে হারে মানুষ মারা যেত এখন তা অনেককাংশে কমে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যারা টাইফয়েড রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেন তাদের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থেকে যায়। এই সমস্যাগুলো রোধ করে আমরা এগিয়ে যেতে পারলে রাষ্ট্র সুন্দর এবং উন্নত হবে। এই টিকার প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা সমাজে বিদ্যামান,এইগুলো প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
টিকা নেওয়ার পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে উল্লেখ করে কমিশনার আরো বলেন, টিকা নেওয়ার পর শরীরে যে জ্বর এবং এ্যালার্জি সমস্যা হয় তা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এই টিকা হালাল। এই টিকা তৈরিতে বিশ্বের নানা ধর্মের মানুষ যুক্ত থাকে। সিনথেটিকালি যেটি তৈরি হয় সেটি মানুষ গ্রহণ করতে পারে। টিকা গ্রহণের পর যে এ্যালার্জি এবং জ্বর জনিত যে সমস্যা সেটি সাময়িক। টিকা গ্রহণের পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে জ্বর হয়, ফলে টিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এ্যালার্জিজনিত যে সমস্যা সেটি গণহিস্টিরিয়ার ফলে হয়ে থাকে। সাধারণত শিশু ও মহিলার এটির বেশি স্বীকার হতে হয়। এটি সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। টাইফয়েড সাধারন জ্বর মনে হলেও এটি সাধারণ না। দুই সপ্তাহ যাবত এই জ্বর স্থায়ী হয়। শিশুরা এটিতে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এই টিকা নিতে হবে। টিকারপার্শ্ব পতিক্রিয়া সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। টিকা নেওয়ার দিন শরীরে জ্বর থাকলে টিকা নেওয়া যাবেনা।
কমিশনার বলেন টিকার বাংলাদেশে টিকা প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল। এর ধারাবাহিতায় টাইফয়েড টীকা চট্টগ্রামের ৯৭ লক্ষ শিশুকে এর আওতায় আনা হচ্ছে, তার মধ্যে ৪৪ লক্ষ শিশুকে টিকাদান সম্পন্ন করা হয়েছে। টাইফয়েড পানিবাহিত রোগ। বাইরের বিভিন্ন ধরনের খোলা ও নোংরা খাবার থেকে এই রোগের সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রামে উপজেলায় এই টিকা নেওয়ার হার বেশি হলেও মহানগরে এটি অনেক কম। এই ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হিরুজ্জামান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, টিসিভি টিকা খুবই নিরাপদ ও কার্যকরী। সারা বিশ্বব্যাপী এই টিকা বিরুপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শিশুরা গ্রহণ করছে। পাকিস্তান, নেপাল ও বিভিন্ন দেশে এই টিকা প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাবহ্রত টিসিভি টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কতৃক যাচাইকৃত। টিসিভি টিকা দেওয়ার পর সামান্য প্রতিক্রিয়া যেমনঃ টিকা দেওয়ার স্থানে সামান্য লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, সামান্য ব্যথা,অল্প জ্বর,ক্লান্তি ভাব দেখা দিতে পারে যে গুলো এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
আয়োজিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসাবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বী, ইউনিসেফ চট্টগ্রামের প্রধান মাঠ কর্মকর্তা মাধুরী ব্যানার্জী, জেলা সিভিল সার্জন ড. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কর্মশালায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।