জট কাটাতে ফের সংলাপ!

জট কাটাতে ফের সংলাপ!
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর থেকে গণভোটের তারিখসহ বেশ কিছু বিষয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র বিরোধ। প্রকাশ্যে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। হঠাৎ করে রাজনৈতিক এই মতানৈক্য নিয়ে উদ্বেগ আর শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেছে সবমহল থেকে।
এমতাবস্থায় চলমান জটের সমাধান খুঁজতে ফের সংলাপের আভাস মিলছে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করলেও সরকারের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। একই সঙ্গে দলগুলোর পক্ষ থেকেও আলোচনার উদ্যোগের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে।

সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। সেই পথ খোলা রয়েছে। সরকার এখন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ভাবছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। একইভাবে গণভোট করার বিষয়ে মতামত জানতে শিগগিরই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করা হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের মতামত নিয়েই গণভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, সরকার মনে করছে বর্তমান বাস্তাবতায় জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট হলে সব দিক থেকে উত্তম। এবং সেই হিসেবেই আগাচ্ছে প্রস্তুতি। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এবং গণভোটের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা।

আপাতত সরকারের মনোভাব দেখতে চায় বিএনপি। গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে।

সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এলো।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর থেকে বিএনপি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে সংস্কার প্রস্তাবগুলোই শুধু উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের সভায় আলোচনা হয়নি, এমন বিষয়ও যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট নিয়েও আপত্তি রয়েছে বিএনপির।

অন্তর্বর্তী সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলেও মন্তব্য করেছে দলটি। পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার অবসান ঘটিয়ে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দিকে মনোযোগী হতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি। এ ছাড়া বিএনপি নির্বাচনের দিনই এই গণভোট অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছে। নির্বাচনের আগে গণভোট কোনোভাবেই মানবে না দলটি।

অন্যদিকে জামায়াতসহ সমমনা ৮ দল এবং এনসিপি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশকে সাধুবাদ জানিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এমন অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছে বিএনপি। জামায়াত ও এনসিপিও বলছে, প্রয়োজন হলে তারাও সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে। তবে তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে অনঢ়।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রয়োজন হলে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে কথা বলবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে। আপনারা দয়া করে ওই সমস্যাগুলো সমাধান করে যাতে সবাই একসঙ্গে আমরা নির্বাচনের দিকে যেতে পারি। এ সমস্যার সমাধান করে আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করতে পারি, সেই পথে এগিয়ে চলুন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ যে সংকট তৈরি করেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন, আমি বিশ্বাস করি এ সংকট কেটে যাবে। এ দেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। পরাজয় বরণ করেনি, পরাজয় বরণ করবে না।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়গুলো উত্থাপন করব কি না তা আপনাদের যথাসময়ে জানানো হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে দলের বক্তব্য তুলে ধরেছে। এখন সরকারকেই এই সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এই বিষয়ে আলোচনা করবে। দেখা করার বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা  হয়তো সামনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারি। তবে এখনও দলে এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের স্পষ্ট দাবি একটাই জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করতে হবে। সেটা চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে হলে উত্তম হয়। জাতীয় ভোটের আগে গণভোট না হলে তার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।

গণভোট আয়োজন নিয়ে জামায়াত ছাড় দিবে কি না, জবাবে তিনি বলেন, আমরা গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে আয়োজনের দাবিতে অনড় আছি। অনড় থাকব।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email