বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছেন জানিয়ে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস হবে, গ্রিন ডিজেল হবে। আপনারা বর্জ্য বিক্রি করবেন, আমরা টাকা দেব। সেই সময় চলে আসবে। কোনোক্রমে হতাশ হবেন না। যে টাকা এখন ডোর টু ডোর বাবদ দিচ্ছেন- ৭০ টাকা, সেটি আপনাদের বিনিয়োগ। একপর্যায়ে এটা বিনামূল্যে হয়ে যাবে। আরও পরে উল্টো টাকা আপনারা পাবেন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে কাজীর দেউড়ির আইসিসিতে মেয়র শাহাদাত হোসেনের এক বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, এ বছর ৫০-৬০টি বড় বড় রাস্তা উপহার দেব। ১০টি নাগরিক সেবা নিয়ে আমাদের চট্টগ্রাম অ্যাপস উপহার দেব ডিসেম্বরে। নগরে ৩ হাজার টনের বেশি বর্জ্য তৈরি হয়। ২ হাজার ২০০ টন আমরা সংগ্রহ করতে পারি। আমি ডোর টু ডোর প্রকল্প চালু করেছি। ঘর প্রতি ৭০ টাকার বেশি নিলে ফেসবুকে বেশি না দিয়ে সিটি করপোরেশনে জানাবেন, তাদের বাতিল করে দেব। দেশে প্রথম চট্টগ্রামে বায়োগ্যাস উৎপাদন করতে যাচ্ছি। বছর-দেড় বছর পর ময়লা নেওয়ার জন্য টাকা দেব। শহর ক্লিন রাখতে হলে শতভাগ বর্জ্য সংগ্রহ করতে হবে। ডোর টু ডোর প্রকল্পের কারণে এ মাসে ৫০০ টন বেশি বর্জ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি।
কমার্শিয়াল হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান মেয়র। বন্দর থেকে অন্তত ২০০ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স পাওয়া আমাদের হক। আ জ ম নাছিরের সময় ৫১ কোটি টাকাকে ১১ কোটি টাকা করা হয়েছে। খোরশেদ আলম সুজনের সময় ঘষামাজা করা হয়েছে। মেয়র রেজাউলের সময় ধরা পড়েছে। আমি শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া শুরু করেছি। শোকজ করেছি।
তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং বড় চ্যালেঞ্জ। কিশোরদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে। মাদকের কুফল জানাতে হবে। এর জন্য অভিনেতা পলাশের (কাবিলা) সঙ্গে একটি প্রকল্পে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাড়ে তিন লাখ পরিবারকে নাগরিক কার্ড দেওয়া হয়েছে। বেকারদের জন্য আইসিটি করবো কালুরঘাটে। চর বাকলিয়ায় পর্যটন টাউন করব, সেখানে অনেকে চাকরি পাবে। মনোরেল প্রকল্প শুরু হলে ৮-১০ হাজার বেকারকে চাকরি দিতে পারব।
বিশেষ অতিথি ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ বলেন, সারাদেশের মানুষ নিশ্বাস নিতে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বেড়াতে আসেন। তাই পুরো চট্টগ্রামকে নিশ্বাসের জায়গায় পরিণত করতে হবে। চট্টগ্রাম শহরে ভালো কোনো পার্ক নেই। ঢাকার রমনা পার্কের মতো পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও অ্যাকুয়ারিয়াম দেখতে চাই। বন্দর নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যক্তিস্বার্থে বাধা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আমি চট্টগ্রামের মানুষ নই। কিন্তু চট্টগ্রামকে আমরা ভালোবাসি।
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি কার সঙ্গে চলা উচিত- নিজেও জানেন। সতর্ক না হলে বড় বিপদে পড়বেন। সুস্থ রাজনীতি করার অনুরোধ জানাই।
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, আমাদের জেলা পুলিশ লাইনে কোমর পানি হয়ে যেত, প্যারেড করা যেত না। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়েছে। জলাবদ্ধতার মূল কারণ ছিল পানি নিষ্কাশনের পথে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লোকজন দোকান গড়ে তুলেছিল। সামনের দিনে সবাই মিলে বাসযোগ্য শহর হিসেবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে পারব।
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, মেয়র শাহাদাত বিনয়ী ও সৎ মানুষ। আপসহীন রাজনীতিক। জলাবদ্ধতা নিরসনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ২৪ কোটি লিটার পানি বাইরে পাম্প করতে পারব আমরা। মেয়রের নেতৃত্বে নতুন চট্টগ্রাম গড়ে তুলতে পারব।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী প্লাস্টিক ও পচনশীল বর্জ্য ফেলার জন্য নগরে লাল ও সবুজ রঙের বিন দেওয়ার জন্য মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান।
চসিক সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি মনোয়ারা বেগম। বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যসচিব জাহিদুল করিম কচি।
অনুষ্ঠানে মেয়রের এক বছরের কার্যক্রমের ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও উন্নয়ন প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মেয়র প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সিস্টেম উদ্বোধন করেন।