বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক জাহানারা আলমের এক সাক্ষাৎকার নিয়ে তোলপাড় বিশ্ব ক্রিকেটে। গত বৃহষ্পতিবার অর্থাৎ, ৬ নভেম্বর একটি ইউটিউব চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি একাধিক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। যারমধ্যে অন্যতম ছিল তাঁকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ। এ বার সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম জাতীয় দলে খেলার সময় যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় নারী দলের সাবেক নির্বাচক মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু এবং নারী বিভাগের সাবেক ইনচার্জ প্রয়াত তৌহিদ মাহমুদ তাকে যৌন হয়রানি করেছিলেন।
জাহানারার দাবি, শুধু তাই নয়, তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার নষ্ট করার পেছনেও দলের কিছু কোচিং স্টাফ ও কয়েকজন খেলোয়াড়ের ভূমিকা ছিল।
জাহানারার এই গুরুতর অভিযোগের পর বিষয়টি তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বৃহস্পতিবার রাতেই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানিয়েছে, অভিযোগগুলোর সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন ও সুপারিশ জমা দেবে।
বিসিবির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের এক সাবেক সদস্যের করা অভিযোগে দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির অসদাচরণের উল্লেখ রয়েছে। বিসিবি সব খেলোয়াড় ও কর্মকর্তার জন্য একটি নিরাপদ, সম্মানজনক ও পেশাদার পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তদন্ত শেষে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এদিকে, ঘটনাটিতে জাহানারার পাশে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেটারদের সংগঠন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)। সংগঠনটি দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কোয়াব একই সঙ্গে নারী ক্রিকেটের জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সব স্তরে এমন ঘটনার গভীর তদন্তেরও দাবি জানিয়েছে।
এর আগে এক জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নারী দলের বর্তমান অধিনায়ক নিগার সুলতানার বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছিলেন জাহানারা। সে সময় বিসিবি সেই অভিযোগগুলোকে 'ভিত্তিহীন' বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল।
২০১১ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় জাহানারা আলমের। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন।

'পিরিয়ড শেষ হলে জানাস, ডাকব...', বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেটে কত নোংরামি? ফাঁস করলেন জাহানারা
জাহানারা আলম দাবি করেছেন, ২০২২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় দলের এক প্রাক্তন নির্বাচক এবং বিসিবির কয়েকজন কর্তা তাঁর প্রতি অনুপযুক্ত আচরণ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, 'আমি একবার নয়, একাধিকবার অশালীন প্রস্তাবের মুখোমুখি হয়েছি। ক্রিকেট পরিবারের সদস্য হিসেবে তখন প্রতিবাদ করার মতো অবস্থায় ছিলাম না, কারণ কর্মজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় ছিল।'
অস্ট্রেলিয়া থেকে এক সাক্ষাৎকারে জাহানারা জানান, 'তৌহিদ ভাই বাবু ভাইয়ের মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু এরপর থেকেই মঞ্জু ভাই আমার প্রতি খারাপ আচরণ শুরু করেন। ২০২২ বিশ্বকাপের সময়ও তিনি অশালীন প্রস্তাব দেন। তখনই আমি বোর্ডের প্রাক্তন পরিচালক শফিউল ইসলাম নাদেল এবং সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরীকে লিখিতভাবে জানাই।'
BCB-র পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, ‘জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন সদস্যের করা অভিযোগে দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের উল্লেখ রয়েছে। সব খেলোয়াড় ও কর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ, সম্মানজনক ও পেশাদার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা দায়বদ্ধ। বোর্ড বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এবং তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
BCB জাহানারার অভিযোগের ভিত্তিতে যেই তদন্ত কমিটি তৈরি করেছে সেই কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করবে বলে জানিয়েছে। এই বিষয়ে জাহানারার পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের সংগঠন। তাদের পক্ষ থেকে দোষীদের শাস্তির দাবি করা হয়েছে।