আজ রোববার সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, রাত ৭টার দিকে কারওয়ান বাজার মেট্রো স্টেশনের নিচে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ, মিরপুর-১২ মেট্রো স্টেশনের নিচে ও সাড়ে ৯টায় বাংলামোটরে এনসিপির অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ককটেল বিস্ফোরণ হয় রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাসার সামনে। রাত ১০টার দিকে একটি মধ্যবাড্ডায় একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এছাড়াও গতকাল রাত থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ড ও ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে ১৩ নভেম্বর হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। ওইদিন ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি পালন করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা নেতারা আগামীকাল সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। মূলত এসব কর্মসূচি দিয়ে সারাদেশের মানুষকে আতঙ্কে রাখতে চায় দলটি।
সাধারণ মানুষ বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতারা এখন দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। জ্বালাও-পোড়াও যেন এখন দলটির নেশায় পরিণত হয়েছে। তারা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সরকারি কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ও গণপরিবহনে গত কয়েক দিন ধরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। আবারও দলটি গুপ্ত হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার পরিকল্পনা করছে। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাবে নিষিদ্ধ দলটি। মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো ১৭ নভেম্বর অবস্থান নেবে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নেবে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগের নেতাকর্মীরা। সাম্প্রতিক হামলাগুলোর ধরন একই। ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মোটরসাইকেলযোগে পরিবহনে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, হামলা, ভাঙচুর করে তাৎক্ষণিক পালিয়ে যায়। আবার কেউ কেউ চোরাগুপ্তা হামলা করে গা-ঢাকা দিতে গিয়ে ধরা পড়েছে। আবার পানিতে পড়ে মারাও গেছে। এদের বিস্ফোরণে ব্যবহৃত ককটেলের ধরনও একরকম ছিল। পেট্রোলভর্তি টিনক্যান ও রডের টুকরা ব্যবহার করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আলী আশরাফ সময়ের আলোকে বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ নামক এই সন্ত্রাসী দলটির ১৭ নভেম্বর কমপ্লিট শাটডাউন নামে যে কর্মসূচি দিয়েছে, এই হাঁকডাক কোনো কাজে আসবে না। গত ১৩ নভেম্বর যানবাহন চলাচল ও সড়কে মানুষের চলাচল ছিল। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজপথে ছিল একাট্টা। বিভিন্ন স্থানে সাধারণ জনগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজপথে সতর্ক পাহারায় ছিল।
নগরীর সোবহানবাগের চা দোকানি আবুল হাশেম বলেন, নানা রাজনৈতিক মতভিন্নতা থাকলেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবাই একজোট, এটা আবারও প্রমাণ হয়েছে। অথচ তারা বলেছিল, বন্দি অবস্থায় থাকবে জনজীবন, যানবাহন, সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। আজও জনগণও তাদের প্রতিহত করবে।
রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, শেখ হাসিনার বিচার হতেই হবে। লকডাউন আর কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দিয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে রায় বন্ধ করা যাবে না।
বাংলামোটরে সাজ্জাদ হোসেন নামের এক পথচারী বলেন, জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমরা মাঠে ছিলাম। শেখ হাসিনার সরকার ও তার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে, তাদের বিচার হতে হবে।
কারওয়ান বাজারের এক মুদি দোকানি বলেন, গণহত্যার দায়ে ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় দেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আমরা চাই এই রায়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ বিচার হোক। তাদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করতে আমরা দেব না। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা হবে। গত ১৩ নভেম্বর জনগণের বিরুদ্ধে লকডাউন কর্মসূচি পালন হয়নি। আজ তারা মাঠে নামলে দেশের মানুষই তাদের প্রতিহত করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী চোরাগুপ্তা হামলা কিছুটা ভোগান্তি তৈরি করতে পারে, কিছু মানুষকে টার্গেটেড কিলিং করানো যেতে পারে। কিন্তু দিন শেষে রাজনীতি দাঁড়াবে না। দলটি আজ ১৭ নভেম্বর কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দিয়ে তাদের কিছু নেতাকর্মীকে বিপদে ফেলছে। এর বেশি কিছু হচ্ছে না। এটা দেশের মানুষ মানবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা। এদিন বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় মানুষের আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। রায় হলে আওয়ামী লীগ ব্যাকফুটে চলে যাবে। পলে তারা এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম-খুন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে দলটির দ্বারা। ২৪-এর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছে। গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে শেখ হাসিনা নিজেই। তাই এ ধরনের কর্মসূচি না দিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত দলটির। কিন্তু তারা তা করেনি। গত ১৩ নভেম্বর লকডাউন কর্মসূচি নামে সারাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। রাজধানীতে বাসে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন দিয়েছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না। আসলে তারা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইছে।