
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক-শান্ত রয়েছে। ঘটনাস্থল ও এর আশপাশজুড়ে মোতায়েন রয়েছে যৌথবাহিনী। সংঘর্ষের ঘটনায় আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চবি’র পূর্ব নির্ধারিত সকল বিভাগ-ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অন্যদিকে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন। সংঘর্ষে আহত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. কামাল উদ্দীনকে এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। জোবরা এলা বাসীর পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবী দেওয়া হয়েছে।
দুদিন ধরে শিক্ষার্থী- জোবরা গ্রামবাসী চলা সংঘর্ষে প্রায় ১৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫০০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক), পার্কভিউ হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, আর ২ জন আইসিইউতে রয়েছেন।গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই নম্বর গেট এলাকায় কিছু দোকান খোলা থাকলেও মানুষের চলাচল সীমিত। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় সেনাবাহিনী ও র্যাব অবস্থান করছেন এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস খোলা থাকলেও সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। চবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ২ নম্বর গেট এলাকা সহ সংশ্লিষ্ট স্থানে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এছাড়া, ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের নিরাপদ থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো উন্মুক্ত রাখা হবে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা খরচও বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এছাড়াও জোবরা এলাকায় থাকা লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করার উদ্যোগ নেবে। দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও জোবরা-ফতেপুর এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্দেশ্যে ২১ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন এই কমিটির দায়িত্বে থাকবেন। কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে রবিবার দুপুর ১টায়।
জোবরা বাসীর ৭ দফা দাবি দেওয়া হয়েছে।দাবী গুলো হল
১. নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ:এলাকার সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চভাবে নিশ্চিত করতে হবে।২. উসকানিদাতাদের শাস্তি:সংঘর্ষে যারা উসকানি দিয়েছে বা অশান্তি সৃষ্টি করেছে, তাদেরকে আজীবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
৩. ক্ষতিপূরণ প্রদান:সংঘর্ষে আহতদের পাশাপাশি যাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাটে হামলা হয়েছে বা গরু নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাদের সকলের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।৪. সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান:
ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে কোনো সমস্যা হলে, তা প্রশাসন ও এলাকার প্রতিনিধিদের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে, যাতে কোনো তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে না পারে।
৫. ভাড়া বাসায় শালীন আচরণ:ভাড়া বাসায় বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা অবশ্যই শালীনভাবে চলাফেরা করবে এবং এলাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।৬. অনৈতিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ:ভাড়া বাসায় মাদক সেবন, নারী-পুরুষের অনৈতিক অবস্থান এবং গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে চিৎকার বা গোলমাল যেন না হয়—সে জন্য কঠোর নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. প্রশাসনিক তদারকি জোরদার:বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত তদারকি বাড়াতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংঘর্ষ বা সহিংসতার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এর আগে শনিবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের কাছে দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর ভাড়া বাসায় প্রবেশ নিয়ে দারোয়ানের সঙ্গে তর্কে জড়ান। দারোয়ান তাকে মারধর করলে ছাত্রী সহপাঠীদের জানালে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে আসে। পরে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনী অবস্থান নিলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
পরদিন রবিবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ২ নম্বর গেটসহ আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও স্থানীয়রা সড়কে অবস্থান নিতে শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল ও কটেজ থেকে বের হয়ে একত্রিত হয়ে ২ নম্বর গেট এলাকায় গেলে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে প্রায় ১৫০০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে ৫০০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক), পার্কভিউ হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, ২ জন আইসিইউতে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্থানীয়রা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
চমেকের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব জানিয়েছেন, একসঙ্গে আহত অবস্থায় এত শিক্ষার্থী আগে দেখা যায়নি। লাঠি, কাঠ, ইটপাটকেল ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন।
চমেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন জানিয়েছেন, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ জনকে নিউরোসার্জারি ও ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।সংঘর্ষের ঘটনায় সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে চবি প্রশাসন এবং ক্লাসও হয়নি। উপ-উপাচার্য কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত রাখতে কাজ করছে।