
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একাধিক মামলার আসামি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে আদালতে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র চট্টগ্রাম মহানগর স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো.আবদুর রহমানের আদালতে এই আবেদন করা হয় বলে জানিয়েছেন দুদকের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন।
তিনি জানিয়েছেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে আজ (বৃহস্পতিবার) আদালতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে। আগামী রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এদিকে, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরের আগ্রাবাদ এলাকা থেকে সাবেক এই মন্ত্রীর বিদেশে অর্থ পাচারের বাংলাদেশি এজেন্ট আব্দুল আজিজ ও তার ‘সম্পদ দেখাশোনার’ দায়িত্বপ্রাপ্ত আরামিট গ্রুপের এজিএম উৎপল পালকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আরামিট গ্রুপের এজিএম উৎপল পাল সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশের সম্পদ অর্জন ও দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী। আর আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের এজিএম আব্দুল আজিজ সম্পত্তি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাদের কাছ থেকে দুইটি ল্যাপটপ ও মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। এসব ডিভাইস থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ফরেনসিক করার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। উৎপল পাল দেশ থেকে দুবাই ও দুবাই থেকে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ তথা মাস্টার মাইন্ড।
এর আগে, চলতি বছরের ২৪ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে-১ এ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী, ভাই-বোন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজ। মো. মশিউর রহমান বুধবার তাদের গ্রেপ্তারের পর ডবলমুরিং থানায় রাখেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা আরামিটের কর্মকর্তাদের নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির জন্য ১৮০ দিনের মধ্যে ফেরতযোগ্য ‘টাইম লোন’ আবেদন করেন। নিজ পরিবারের মালিকানায় থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে (ইউসিবিএল) এ আবেদন করা হয়।
ইউসিবিএল থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর সেই টাকা একই ব্যাংকে বাকি চারটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা অ্যাকাউন্ট নম্বরে বিভিন্ন অঙ্কে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেই টাকা পাচার করা হয়। গ্রেপ্তার আব্দুল আজিজের নামে ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল। ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করা টাকার কিছু অংশ সেই প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ মন্ত্রী থাকার সময় ২০১৯-২০ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রী রুকমীলার নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে-৯টিসহ অন্যান্য দেশেও বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/জমিসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের আদালত। এছাড়া গত ৫ মার্চ অপর এক আদেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) আদেশ দেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে তাদের ৫ কোটি ২৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জমা রয়েছে।
অপর আদেশে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাইফুজ্জামানের ১০২ কোটি টাকার শেয়ার ও ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দেরও আদেশ দেন আদালত। আর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন আদালত।