
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি; দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামী ১৫ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। চাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই প্যানেল ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির নানান ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন। তবে এরই মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা।
কেবল প্রচারণা নয়, তারা ছুটছেন শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা জানতে এবং তা সমাধানে চাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের সমর্থন, যাতে আসন্ন চাকসু নির্বাচনে বিজয় লাভ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে তারা কাজ করতে পারেন।
আসন্ন চাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এবার বিশেষ নজর কেড়েছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ। ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাত্রদল জানিয়েছে, নারী শক্তির নেতৃত্বই হবে তাদের প্রধান অগ্রাধিকার। চাকসুর ইতিহাসে খুব কম সংখ্যকবার নারী প্রার্থীদের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেলেও এবারের নির্বাচনে ছাত্রদল ভিন্ন ধারা তৈরি করেছে। সংগঠনটির নেতারা মনে করছেন, নারী শিক্ষার্থীদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা ছাড়া প্রকৃত গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সেই লক্ষ্যেই প্যানেলটিতে নারীকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন পদে মনোনীত করা হয়েছে।
ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, তাদের প্যানেলের এই নারী প্রার্থীরা শুধু প্রতীকী উপস্থিতি নয়; তারা প্রত্যেকেই দীর্ঘদিন ধরে সংগঠন এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়। শিক্ষার্থীদের অধিকার, নিরাপত্তা ও বৈষম্যমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের হয়ে চাকসুতে প্রার্থিতা করা নারী প্রার্থীরা হলেন ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে নুজহাত জাহান, সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে শাফকাত শফিক, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে শ্রুতিরাজ চৌধুরী ও নির্বাহী সদস্য পদে নুসরাত জাহান।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে বলেন, আমরা চাই ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদ, স্বতঃস্ফূর্ত ও সমঅধিকারের পরিবেশে চলাফেরা করতে পারে। চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সেই পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির নারী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিকভাবে করণীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে এ বিষয়ে ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নুজহাত জাহান জানান, শাটলে ছাত্রীদের জন্য একক বগির ব্যবস্থা করা, আবাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি অনাবাসিক নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা, মাতৃকালীন সময়ে ছাত্রীদের সুবিধার্থে অবশ্যই “ডে কেয়ার সেন্টারের” পুরা দমে সচল করা, ছাত্রীদের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য মেডিকেল ক্যাম্পিং করার। এছাড়াও আমাদের ছাত্রীদের পাঁচটি হলের আশেপাশে কোন ডিসপেন্সারি নেই। সেখানে ফার্মেসি করা যা ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে। সর্বোপরি নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে ছাত্রীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়তে হবে।
নারীর অগ্রায়নে ছাত্রদলের ভূমিকা সম্পর্কে সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদপ্রার্থী শাফকাত শফিক দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে বলেন, ছাত্রীদের কল্যাণ আমাদের অগ্রাধিকার। তাই আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নারী অগ্রযাত্রায় ছাত্রদল বরাবরই সক্রিয় ও সোচ্চার। আমরা বিশ্বাস করি, নারী নেতৃত্ব ছাড়া কোনো আন্দোলন কিংবা অগ্রগতি পূর্ণতা পায় না। তাই ছাত্রদল নারীর অধিকার, নেতৃত্ব ও সমান সুযোগের প্রশ্নে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
এ বিষয়ে চাকসুর নির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ছাত্রদল সর্বদা চায় নারীরা যেন অধিকার সচেতন এবং রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠে। নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিতকরণে ছাত্রদল সর্বদা সচেষ্ট। পাশাপাশি ছাত্রদল নারীদের অগ্রায়নের
যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। ছাত্রদল চায় রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সর্বস্তরে যেন নারীরা নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে এবং এগিয়ে আসতে পারে।