
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আহছানুউল্লাহ ভূঁইয়া বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক জনতার রক্ত ও আন্দোলনের ফসল জুলাই সনদকে পাশ কাটিয়ে কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নিবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, অতীতের গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার এবং পার্শ্ববর্তী দেশের তাঁবেদার ও ফ্যাসিবাদের সহযোগী জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি প্রদান ও জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে কেন্দ্র ঘোষিত গণসংযোগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক আহছানুউল্লাহ ভূঁইয়া আরও বলেন, জুলাই সনদ হলো জনগণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত চুক্তি। এ সনদের ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এর বাইরে কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, জনগণের প্রতিটি ভোটের প্রতিফলন ঘটাতে হলে পিআর পদ্ধতি ছাড়া বিকল্প নেই। একতরফা সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ আর চলবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ করতে হবে। সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত গণহত্যার বিচার না হলে জাতি শান্তি পাবে না। আমরা দৃশ্যমান বিচার চাই।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খায়রুল বাশার, মোহাম্মদ উল্লাহ, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এ কে এম ডা. ফজলুল হক প্রমুখ।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি আবু তালেব, টিএস পির সিবিএ সহ সভাপতি আরিফুর রহমান, হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টর ইউনিয়ন সভাপতি সাব্বির ওসমানী, বিদ্যুৎ সেক্টর সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বন্দর ষ্টিবিটর শ্রমিক নেতা আবুল বশর, তেল সেক্টরের শ্রমিক নেতা আবু নাঈম সুজন, সিএন্ডএফ এর সিবিএ নেতা মুহাম্মদ ফোরকান আজাদ, তামারকুন্ডি লেইন দোকান কর্মচারী শ্রমিক নেতা মুহাম্মদ সেলিম রেজা, সিএনজি অটোরিকশা সেক্টর উত্তরের সভাপতি বশির আহমদ, বন্দর শ্রমিক সংঘের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, বি আই ডিসি সিবিএ ওয়াহিদুজ্জামান, বি আর ই এল এর সভাপতি মুনিরুল ইসলাম মজুমদার।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে শ্রমিকদের ত্যাগ অনেক বেশি, কিন্তু স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন এখনো সেভাবে হয়নি- শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই চব্বিশের আন্দোলন গণবিস্ফোরণে রূপ নিয়েছিল। সর্বাত্মক প্রতিরোধ ও প্রতিবাদে জীবন-জীবিকার ঝুঁকি নিয়েই শ্রমিকরা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল। পোশাক শ্রমিকরা তাদের কারখানা ছেড়ে রাজপথে নেমে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিল।
তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে শ্রমিকদের অনেকেই নিহত ও পঙ্গুত্ব এবং অন্ধত্ব বরণ করেন। তাদের ব্যাপক আত্মত্যাগের ফলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সফল হয়েছিল। তাদের ব্যাপক ত্যাগ কুরবানির মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, কিন্তু তাদের অবদানের সঠিক স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন এখনো হয়নি।
নগর ভারপ্রাপ্ত আমীর আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশে শ্রমিকদের জন্য অনুকূল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান এবং
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। শ্রমিকদের অবদানের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন করতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে শহীদ পরিবার ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবি পূরণ করে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
উক্ত মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের চট্টগ্রাম মহানগরীর সহ সভাপতি মকবুল আহমদ, নগর কর্মপরিষদ সদস্য ছিদ্দিকুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, হামেদ হাসান ইলাহী, প্রফেসর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মাহমুদুল আলম, নগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল্লাহ আদিল, সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম ও মাওলানা জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
পাঁচ দফা দাবি হলো- (১) জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে; (২) নির্বাচন হতে হবে পিআর পদ্ধতিতে; (৩) সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে; (৪) গণহত্যার বিচার দৃশ্যমানভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে; (৫) বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাঁবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার পরিচালনা করতে হবে এবং বিচার চলছে এমন সময় তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।