বাবা জীবিত থাকার প্রমাণ চাইলেন ইমরান খানের ছোট ছেলে কাসিম

বাবা জীবিত থাকার প্রমাণ চাইলেন ইমরান খানের ছোট ছেলে কাসিম

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খানকে ঘিরে নতুনভাবে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তার ছোট ছেলে, ২৬ বছর বয়সী কাসিম খান শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টের মাধ্যমে দাবি করেছেন যে, তার বাবা ‘জীবিত আছেন’ এবং তিনি সরকারের কাছে তা প্রমাণ করতে চাইছেন।

কাসিমের এই দাবি এসেছে এমন একটি সময়ে, যখন পাকিস্তানে ইমরান খানের মৃত্যু সংক্রান্ত গুজব ও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। আফগানিস্তানের এক গণমাধ্যম সম্প্রতি দাবি করেছে, ইমরান খান কারাগারের ভেতরে নিহত হয়েছেন। তবে এই খবর ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন কাসিম।
২০২৩ সাল থেকে ইমরান খান পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং যোগাযোগ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সরকারের নির্দেশে তার সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ইমরান খানের তিন বোন নরীন খান, আলিমা খান ও উজমা খান অভিযোগ করেছেন, তারা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বারবার দেখা করতে গেলেও তাদেরকে বাবা ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়নি কারাগারের কর্তৃপক্ষ। কাসিম এই পরিস্থিতিকে তুলে ধরে বলেন, আমাদের পরিবারকে বাবার অবস্থার ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তার বোনরা তাদের বাবার সাক্ষাত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ‘বাবা ৮৪৫ দিন ধরে কারাবন্দি আছেন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে গত দেড় মাস ধরে তিনি নির্জন কক্ষে রয়েছেন। আমাদের দেখা করতে দেয়া হয় না, ফোনে কথা বলতেও দেয়া হয় না। এই অবস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন ছাড়া কিছু নয়, কাসিম বলেন।

কাসিম তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন যে, তার বাবা জীবিত আছেন তা প্রমাণ করার পাশাপাশি তিনি অবিলম্বে তার মুক্তির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক মহলকেও হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। আমার বাবার নিরাপত্তা এবং নির্জন কারাবাসের প্রতিটি পরিণতির দায় পাকিস্তান সরকারকেই নিতে হবে। আমি চাই বিশ্ব নেতারা এ বিষয়ে নজর রাখুক, তিনি জানান।

কাসিমের এই পোস্টের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, পরিবার ইমরান খানের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সরকারের কাছে নিশ্চিততা চায়। তিনি আরও বলেছেন, বাবার স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠু আচরণ নিশ্চিত না হলে এটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক নীতি লঙ্ঘন হবে। কারাগারে দীর্ঘ দিন ধরে তার উপর কৃত্রিমভাবে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই আইনসম্মত নয়।

গত মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে পিটিআই দলের নেতাকর্মী এবং ইমরান খানের পরিবারের সদস্যরা কারাগারের বাইরে উপস্থিত হয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানাতে যান। তবে তাদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনা ঘটে। পিটিআই সূত্রে বলা হয়েছে, খানের তিন বোন এবং সমর্থকরা কারাগারের বাইরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার সময় পুলিশ তাদের হেলমেট ও লাঠি ব্যবহার করে তাড়া করে।

এই ঘটনার পর পিটিআই সরকারের প্রতি কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেছে যে, এটি নির্বাচিত নেতাকে অবৈধভাবে সীমাবদ্ধ করার প্রচেষ্টা। তারা আরও উল্লেখ করেছে যে, ইমরান খানের স্বাভাবিক নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা সর্বোচ্চ প্রয়োজন।

ইমরান খানের মৃত্যুর গুজব পাকিস্তান জুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এ ধরনের তথ্যের কারণে সাধারণ জনগণ এবং রাজনৈতিক সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল অবস্থায় কারাবন্দি নেতাদের উপর গুজব ছড়িয়ে দেওয়া দেশের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

পাকিস্তান পুলিশের পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলিও ইমরান খানের সুরক্ষা এবং অব্যাহত সুষ্ঠু আচরণের নিশ্চয়তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, কারাগারে নেতাদের উপর দীর্ঘ সময়ের নির্জনতা এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগবিধির কঠোর নিয়ন্ত্রণ মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

বর্তমানে কাসিম এবং পিটিআই সমর্থকরা সরকারের কাছে ইমরান খানের জীবিত থাকার প্রমাণ এবং অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে সোচ্চার রয়েছেন। এর পাশাপাশি তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন যাতে কারাবন্দি নেতার নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খানের বিষয়টি পাকিস্তান সরকারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে দূরদর্শী ও মানবিক সমাধান ছাড়া সহজে মীমাংসা করা সম্ভব নয়। যদি পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে এটি দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন উত্তেজনা এবং আঞ্চলিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

কাসিমের এই দাবির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, ইমরান খানের নিরাপত্তা, জীবিত থাকার প্রমাণ এবং মুক্তি এখন রাজনৈতিক ও মানবিকভাবে দেশের অঙ্গীকারের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email