সভায় মুখে ভালো কথা বলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব নয়: জেলা প্রশাসক 

সভায় মুখে ভালো কথা বলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব নয়: জেলা প্রশাসক 

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেছেন, শুধু সভায় মুখে ভালো ভালো কথা বলেই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা যাবে না। তিনি বলেন, “নারী, কন্যাশিশু কিংবা যারা সহিংসতার শিকার হন, তাদের ওপর সহিংসতা চালান আমাদেরই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্যরা।”

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২৫ উপলক্ষে সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিসি জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, “জেলখানায় প্রায় তিন হাজার মানুষ মাদক মামলায় সাজা ভোগ করছেন, কিন্তু তাতে মাদকাসক্তের সংখ্যা কমছে না। অর্থাৎ সব সময় শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আমাদের নিজেদের চরিত্র ও আচরণ সংশোধন করতে হবে।”

তিনি নারী ও শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি আগামী প্রজন্মকে নৈতিকতা শেখাতে পূর্বসূরিদের সঠিক ব্যক্তিত্ব ও নৈতিক আচরণ প্রদর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

এর আগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করা হয়। র‍্যালি শেষে সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে “নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি”—এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শরীফ উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফরিদুল আলম এবং জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ মোছলেহ উদ্দিন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইপসার সহকারী পরিচালক ফারহানা ইদ্রিস।
মো. ফরিদুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের সব বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে নির্যাতনের ঝুঁকিতে থাকা নারী ও শিশুর পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।

মোঃ মোছলেহ উদ্দিন নারীর আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

সভায় মুখে ভালো কথা বলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ সম্ভব নয়: জেলা প্রশাসক 

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন প্রত্যাশীর প্রধান নির্বাহী মনোয়ারা বেগম, ইলমার প্রধান নির্বাহী ও মানবাধিকার কর্মী জেসমিন সুলতানা পারু, স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের মোহাম্মদ আলী সিকদার এবং ব্র্যাক, ইপসা, যুগান্তর, ঘাসফুল, বিটা, সিডিসি, উষা নারী উন্নয়ন সংস্থা, ওয়াইএসডি, কারিতাসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

বক্তারা অনলাইনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী নারী ও প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ সচেতনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ, গণপরিবহন ও কর্মক্ষেত্রে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও সক্রিয়করণ, এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে পরিবারভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

এসময় অংশগ্রহণকারীরা গত দশ মাসে নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনার তথ্য তুলে ধরে বলেন—আইন প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষা ও নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শরীফ উদ্দিন গণপরিবহনে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “পরিবারে পুত্রসন্তানের বিয়ের পর নানা সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যার দায় যেন নারীর ওপর বর্তায় না, সে বিষয়ে তাদের সচেতন হতে হবে।” তিনি নারীর শিক্ষা ও স্বাবলম্বিতার গুরুত্বও তুলে ধরেন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email