দুর্নীতি দমনে ধারাবাহিক রেকর্ড কেবল বিএনপিরই আছে-তারেক রহমান

দুর্নীতি দমনে ধারাবাহিক রেকর্ড কেবল বিএনপিরই আছে-তারেক রহমান

আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বর্তমান দুর্নীতি পরিস্থিতি এবং এ সমস্যা সমাধানে দলটির অতীত অর্জন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে মঙ্গলবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তিনি দুর্নীতিকে বাংলাদেশের লাখো মানুষের জীবনকে ‘দমবন্ধ’ করে দেওয়ার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে দাবি করেছেন, দুর্নীতি দমনে ধারাবাহিক রেকর্ড একমাত্র বিএনপিরই রয়েছে।

তারেক রহমান তাঁর পোস্টে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে দুর্নীতির প্রভাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি কীভাবে দেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, তা বুঝতে দূরে যাওয়ার দরকার নেই। মেধার ভিত্তিতে চাকরি খুঁজতে বের হওয়া স্নাতক বা মাসের পর মাস ধরে সরকারি সেবা পেতে হিমশিম খাওয়া কৃষকের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, হাসপাতালে গিয়ে একটি পরিবারের ভোগান্তি। ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়া উদ্যোক্তাদের সমস্যা। খাবারের মূল্য বৃদ্ধি, শিক্ষা ও সড়কে নিরাপত্তার অভাব, সবকিছুর পিছনে একই কারণ, দুর্নীতি। এই দুর্নীতি লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দমবন্ধ করে ফেলেছে।

তারেক রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আমাদের সেই লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন বাংলাদেশ সত্যিকারের অগ্রগতি করেছিল, যা মূলত বিএনপির আমলেই হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো, পরিষ্কার সরকারি সেবা এবং অর্থনীতিকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার কমিয়ে দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আধুনিকায়ন শুরু হয়, যার মধ্যে ছিল নতুন ক্রয় নীতিমালা, কঠোর আর্থিক আইন, শক্তিশালী নিরীক্ষা ব্যবস্থা এবং পরিষ্কার নজরদারি।

সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল ২০০৪ সালে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) গঠন, যা ছিল একটি স্বাধীন কমিশন এবং বাংলাদেশের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি।

টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) জরিপেও দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নত হয়েছিল এবং মানুষ নিজেরাই দুর্নীতি কমার কথা বলেছিল।

বিএনপি কিছু বড় পরিবর্তনের জন্য গর্ব করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন:

শক্তিশালী অর্থ ব্যবস্থাপনা: বাজেট নিয়ন্ত্রণ, নিরীক্ষা, ব্যাংকিং ও অর্থ পাচার-বিরোধী আইন।
স্বচ্ছ ক্রয় নীতি: প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ও নিয়মের মধ্যে সরকারি ক্রয়, যা পরবর্তীতে দেশের সবচেয়ে বড় স্বচ্ছতার আইনের ভিত্তি তৈরি করে।
উন্মুক্ত বাজার: টেলিকম, গণমাধ্যম, বিমান পরিবহন, যেখানে প্রতিযোগিতা বাড়ায় দুর্নীতি কমে এবং সাধারণ মানুষের সুযোগ বাড়ে।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: প্রশাসন কম জটিল, কম ইচ্ছাধীন এবং মানুষের কাছে বেশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

তারেক রহমান স্পষ্ট করে বলেন, দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক রেকর্ড একমাত্র বিএনপি’রই আছে।

আগামী দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও শক্তভাবে চালানোর জন্য বিএনপির পরিকল্পনার কথা তিনি তুলে ধরেন:

প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা: আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি সেবা, কেউই যেন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে না থাকে।
পুরোপুরি স্বচ্ছতা: উন্মুক্ত দরপত্র ব্যবস্থা, সম্পদ বিবরণী, রিয়েল-টাইম নিরীক্ষা, শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন।
বিচার ও আইনশৃঙ্খলা সংস্কার: পেশাদার পুলিশিং, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ।
ই-গভর্ন্যান্স: লাইসেন্স, জমি, পেমেন্ট, সব অনলাইনে এনে ঘুষের সুযোগ কমানো, যা বিশ্বমান অনুযায়ী ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ দুর্নীতি কমাতে পারে।
হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা: অনিয়ম ফাঁস করতে যারা সাহস দেখায়, তাদের নিরাপত্তা প্রদান।
নৈতিক শিক্ষা: স্কুল-কলেজ থেকেই সততার চর্চা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা।
শক্তিশালী আর্থিক নজরদারি: ডিজিটাল ব্যয় ট্র্যাকিং ও স্বাধীন নিরীক্ষা, সংসদের কঠোর তদারকি।

তিনি উপসংহারে বলেন, বহু বছর অব্যবস্থাপনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই কঠিন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসই প্রমাণ করে, যখন সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন একসাথে আসে, তখন পরিবর্তন অসম্ভব নয়। জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়, বিএনপি আবারও সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email