অসুস্থ শিক্ষকের পাশে ‘মানবিক ডিসি’ জাহিদুল ইসলাম

অসুস্থ শিক্ষকের পাশে ‘মানবিক ডিসি’ জাহিদুল ইসলাম

স্ট্রোকসহ একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চরম আর্থিক সংকটে পড়া এক স্কুলশিক্ষক ও অসুস্থ পিতার চিকিৎসা ব্যয়ে দিশেহারা এক শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার খুদুকখালী গ্রামের মৃত মালেকুজ্জামানের ছেলে স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এরপর চান্দগাঁও থানার অন্তর্গত শমসেরপাড়া এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম প্রাইভেট ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এক সপ্তাহের চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তিনি কিডনি, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত। স্ট্রোকের কারণে তার বাম পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে।

চিকিৎসকদের মতে, স্ট্রোকের প্রভাবে তার গলার খাদ্যনালি ও ফুসফুসে গুরুতর আঘাত লেগেছে। ফলে প্রায় এক মাস ধরে নাকের ভেতর নল দিয়ে তরল ও নরম খাবার গ্রহণ করতে হচ্ছে। বর্তমানে তাকে নিয়মিত থেরাপি নিতে হচ্ছে এবং আজীবন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

চান্দগাঁও থানার খাজা রোডের একটি ভাড়া বাসায় বসবাসরত আবুল কালাম আজাদ প্রায় ৮–৯ বছর ধরে একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করে আসছেন। তার দুই ছেলে বর্তমানে কলেজে অধ্যয়নরত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তার অসুস্থতায় পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম আর্থিক সংকট। চিকিৎসা ব্যয় ও ছেলেদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ায় তিনি দ্বারে দ্বারে সাহায্যের আশায় ঘুরলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হতাশ হতে হয়।

আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত সাপ্তাহিক গণশুনানিতে মানবিক আবেদন নিয়ে হাজির হন এই অসহায় শিক্ষক। তার দুর্দশার কথা শুনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে তার পাশে দাঁড়ান এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেন।

এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডিসি স্যারের ব্যবহার খুবই অমায়িক। তাকে আপাদমস্তক একজন ভদ্রলোক মনে হয়েছে।

একই গণশুনানিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেলা প্রশাসকের মানবিক কর্মকাণ্ডের কথা শুনে হাজির হন কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর গ্রামের শিক্ষার্থী কে এম জয়নাল আবেদীন। তিনি জানান, তার পিতা ইসহাক আহমেদ বারী স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার চিকিৎসা ব্যয় ও পরিবারের খরচ বহন করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। ফলে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় থাকা জয়নালের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনিশ্চয়তায় পড়ে।

জয়নালের করুণ অবস্থা শুনে জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেন এবং তাকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে জয়নাল বলেন, আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানবিক ডিসি জাহিদুল ইসলাম স্যারের কথা অনেক শুনেছি। আজ নিজে তার প্রমাণ পেলাম।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, মানুষ গড়ার একজন শিক্ষক শুধু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারবেন না—এটা জেলা প্রশাসক হিসেবে মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।

কলেজছাত্র জয়নালের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার পিতা একজন মুয়াজ্জিন। পিতার চিকিৎসা ও নিজের উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নেওয়ার জন্য সে আমার সহায়তা চেয়েছিল। সরকারি বাজেট সীমিত হওয়ায় সবসময় পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব না হলেও আমি চেষ্টা করি, যেন কোনো অসহায় নাগরিক সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ত্যাগ না করেন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email