
শহীদ সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন এবং সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমনের আত্মার মাগফিরাত কামনায় ৩০ আগস্ট (২০২৫) শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে এক দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রবীন সাংবাদিক নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ওয়াল্ড প্রেস কাউন্সিল নির্বাহী পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন জামাল খান বড় মসজিদের ইমাম মাওলানা ওসমান। দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের বিশেষ প্রতিনিধি কে. এম. ফোরকান-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক, সাপ্তাহিক পূর্ব বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও চট্টগ্রাম এডিটর’স ক্লাবের সভাপতি এম. আলী হোসেন, সাংবাদিক ও লেখক কামাল পারভেজ, চট্টগ্রাম রিপোর্টাস এসোসিয়েশনের সভাপতি সোহাগ আরেফিন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি শিব্বির আহমদ ওসমান, প্রবীন সাংবাদিক লেখক ও গবেষক কামাল উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নাছির উদ্দিন, সাইফুদ্দিন চৌধুরী জুলেয়, রেজাউল করিম রেজা, মনির হোসেন, কামরুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম প্রমুখ সাংবাদিকবৃন্দ। সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান এবং মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত বলেন, সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মানববন্ধন হয়েছে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডে কোনো মিডিয়ার লোক জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ, তবে যারা ঘন ঘন পক্ষ পরিবর্তন করেন, তারা এর বাইরে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের আজ মব সৃষ্টি করে নির্বিচারে অপমান ও হত্যার করা হচ্ছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের হত্যা ও অবমাননাকারীদের সৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা আনতে হবে। সাথে সাথে যারা ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা এতদিন ধরে ভাতা নিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থ লোটপাট করেছে এবং যে সকল সাংবাদিক অসুস্থ না হওয়ার শর্তেও অসুস্থ হওয়ার ভান করে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে অর্থ নিয়ে প্রকৃত ও সত্যিকারভাবে অসুস্থ সাংবাদিকদের বঞ্চিত করেছে। তাদের এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সাংবাদিক ও লেখক কামাল পারভেজ শত শত মানুষের নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকার সমালোচনা করে বলেন, এটি একটি জাতিগত লজ্জা।
তিনি বলেন, “এক ফ্যাসিবাদ গিয়েছে, আরেক ফ্যাসিবাদ এসেছে।” তিনি বিগত সরকারের আমলে সাংবাদিকদের গুম বা সাইবার নিরাপত্তা আইনে হয়রানির ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তিন মাসের মধ্যে তুহিন হত্যার বিচার হলে তা প্রমাণ করবে বিচার সঠিক পথে এগোচ্ছে। দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক জানান, ১২ই আগস্ট ‘তুহিন ফাউন্ডেশন’-এর যাত্রা শুরু হয়েছে। শত শত মানুষের সামনে নির্মমভাবে তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি গাজীপুর পুলিশ কমিশনারের প্রশংসা করেন। তিনি নতুন সাংবাদিকদের প্রতি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সম্মান জানানোর আহ্বান জানান। সাপ্তাহিক পূর্ব বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও চট্টগ্রাম এডিটর’স ক্লাবের সভাপতি এম. আলী হোসেন, খায়রুল আলম রফিকের দূরদৃষ্টির প্রশংসা করে ‘আসাদুজ্জামান তুহিন ফাউন্ডেশন’-কে তার ফসল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তুহিনকে বাংলাদেশে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং তার পরিবারকে সাহস জোগাতে হবে। আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন বলেন, শহীদ সাংবাদিক তুহিন ফাউন্ডেশনকে সব ধরনের সহযোগিতা এবং ভবিষ্যতে নির্যাতিত সাংবাদিকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। সিআরএ সভাপতি সোহাগ আরেফিন বলেন, দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, সাধারণত সম্পাদকরা মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের খবর রাখেন না, কিন্তু রফিক এই ধারণাকে বদলে দিয়েছেন। তিনি মাত্র ১৫-২০ দিনের মধ্যে তুহিন হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিলকে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। সাংবাদিক ও লেখক কামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের নিজেদের ভুল স্বীকার করার প্রবণতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।