দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন: প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপ, ভোটারদের প্রত্যাশা

দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন: প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপ, ভোটারদের প্রত্যাশা

দীর্ঘ বিরতির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অবশেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। 

দেশের প্রাচীনতম এই ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এখন তুঙ্গে। ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে নানা আলোচনা, সমালোচনা, পোস্টারিং আর প্রচারণা। শিক্ষার্থীরা উন্মুখ হয়ে আছে ভোটের দিনটির জন্য।

ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। এটি শুধু একটি ছাত্রসংসদের নেতৃত্ব নির্ধারণের বিষয় নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ে তোলার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। দীর্ঘ বছর পর নির্বাচন হওয়ায় এবার শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও প্রত্যাশা আরও বেশি।

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন

এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থিত প্যানেল।

বিএনপি সমর্থিত প্যানেল, শিবির সমর্থিত প্যানেল, বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ নানা পক্ষ। প্রতিটি প্যানেলই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ, আবাসন সমস্যা, নিরাপত্তা, পরিবহণ, শিক্ষা ও ক্যাম্পাসের সামগ্রিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন পর ডাকসু নির্বাচন হওয়ায় এবার তারা চান একটি মুক্ত, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক ভোট। প্রতিটি ভোটার যেন নিরাপদে, বাধাহীনভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে—এমন পরিবেশের দাবি জানিয়েছেন তারা।

ভোটারদের প্রত্যাশা

শিক্ষার্থীদের আশা, ডাকসু নির্বাচন হবে উৎসবমুখর পরিবেশে। এমন একটি ক্যাম্পাস তারা দেখতে চান যেখানে থাকবে না কোনো ভয়ভীতি, হবে না ভোটকেন্দ্র দখল বা অনিয়ম। অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা এমন নেতৃত্ব দেখতে চান যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

প্রশাসনের প্রস্তুতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও নিয়ন্ত্রণকক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, তারা চাইছেন শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে।

গণতান্ত্রিক চর্চার পুনর্জাগরণ

ডাকসু নির্বাচন শুধু ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি করে না, বরং জাতীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব রয়েছে। দেশের অনেক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা এই ডাকসুর মাধ্যমেই রাজনীতির মাঠে আসেন। তাই এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক চর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ যত বেশি হবে, তত বেশি এই নির্বাচন তার গুরুত্ব ধরে রাখতে পারবে।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা ইতিবাচক।

এখন প্রয়োজন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করা। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে প্রকৃত নেতৃত্ব বেছে নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সকল ছাত্র সংগঠনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে যেন ক্যাম্পাসে ভোটের দিনটি সত্যিকারের গণতন্ত্রের উৎসবে পরিণত হয়।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email