সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ও আধুনিকায়নে বিআরটিএ‍‍র অগ্রণী ভূমিকা

সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ও আধুনিকায়নে বিআরটিএ‍‍র অগ্রণী ভূমিকা

বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন খাত দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ এবং হাজার হাজার টন পণ্য সড়কপথে পরিবাহিত হয়। কিন্তু এই বিশাল খাতকে নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করছে যে প্রতিষ্ঠানটি, তা হলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা রক্ষা, নিরাপদ যানবাহন নিশ্চিতকরণ এবং আধুনিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে বিআরটিএ দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

মোটরযান নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ প্রদান
বিআরটিএ’র অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো মোটরযান নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ প্রদান। দেশে নতুন যানবাহন বাজারে আসার আগে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় বিআরটিএ’র মাধ্যমে। পাশাপাশি, পুরোনো যানবাহনের জন্য নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়। ফিটনেস সনদ নবায়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো যান্ত্রিকভাবে নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব।

সড়কে আনফিট বা অতিরিক্ত ধোঁয়া নির্গতকারী যানবাহন চলাচল দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায় এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য বিআরটিএ নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকে, যাতে ফিটনেসবিহীন যানবাহনকে জরিমানা বা রাস্তাচ্যুত করা যায়।

ড্রাইভিং লাইসেন্স ও প্রশিক্ষক লাইসেন্স প্রদান
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চালক তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। বিআরটিএ অপেশাদার ও পেশাদার উভয় ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। এর মাধ্যমে চালকদের পরিচয় নিবন্ধিত হয় এবং তারা আইনগতভাবে সড়কে যান চালাতে সক্ষম হয়।

এছাড়া বিআরটিএ প্রশিক্ষক লাইসেন্স প্রদান করে থাকে, যা ড্রাইভিং স্কুল ও প্রশিক্ষকদের জন্য বাধ্যতামূলক। এর ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক তৈরি হয় এবং সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে আসে।

সড়ক পরিবহন খাতে ভাড়া নির্ধারণ
যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্বও বিআরটিএ’র। জ্বালানির দাম পরিবর্তন, সড়ক টোল বা অন্যান্য খরচ বাড়লে বিআরটিএ ভাড়া সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে যাত্রীদের জন্য ন্যায্য ভাড়া নিশ্চিত হয় এবং পরিবহন খাতে অস্থিরতা কমে আসে।

আইন ও বিধি প্রয়োগ
বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন খাত পরিচালিত হয় মূলত মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এবং সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর মাধ্যমে। বিআরটিএ এই আইনগুলোর বাস্তবায়ন তদারকি করে। চালকদের হেলমেট ব্যবহার, সিটবেল্ট ব্যবহার, অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা, গতিসীমা মেনে চলা—এ ধরনের নিয়ম প্রয়োগে বিআরটিএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডিজিটাল সেবা ও অনলাইন ব্যবস্থা
ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিআরটিএ তাদের সেবাকে অনলাইনে নিয়ে এসেছে। এখন গ্রাহকরা অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন, নবায়ন, যানবাহনের নিবন্ধন ফি পরিশোধ, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস ফি ইত্যাদি দিতে পারছেন। এর ফলে দুর্নীতি কমেছে এবং সাধারণ মানুষের সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে।

মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন সার্ভিস পোর্টাল ব্যবহার করে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারছে, যা সড়ক পরিবহন খাতকে আরও স্বচ্ছ ও আধুনিক করে তুলেছে।

সড়ক নিরাপত্তা প্রচারণা
বিআরটিএ শুধু আইন প্রয়োগ নয়, জনগণকে সচেতন করতেও কাজ করছে। তারা নিয়মিত সড়ক নিরাপত্তা প্রচারণা চালায়—পোস্টার, ব্যানার, টিভি বিজ্ঞাপন এবং কর্মশালার মাধ্যমে মানুষকে ট্র্যাফিক আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করা হয়। এর ফলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস এবং নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
তবে বিআরটিএ’র সামনে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দেশে মোটরযানের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু ফিটনেস পরীক্ষা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় জটিলতা অনেক সময় মানুষকে হয়রানির মুখে ফেলে। অনলাইনে আবেদন করা সত্ত্বেও অনেক জায়গায় সময়মতো সেবা না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিআরটিএকে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবা প্রদানের প্রক্রিয়া দ্রুত করতে হবে। জনবল বাড়ানো, ঘুষ-দুর্নীতি রোধ এবং গ্রাহকসেবা সহজীকরণও এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দেশের সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মোটরযান নিবন্ধন, ফিটনেস পরীক্ষা, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান থেকে শুরু করে ভাড়া নির্ধারণ—সব ক্ষেত্রেই বিআরটিএ অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান।

নিরাপদ সড়ক এবং আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিআরটিএ’র কার্যক্রম আরও ডিজিটাল, স্বচ্ছ এবং দক্ষ হওয়া প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, বিআরটিএ দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on whatsapp
Share on email