
গণমাধ্যমের অন্যতম বড় শক্তি হলো সত্য ও নিরপেক্ষ তথ্য উপস্থাপন। কিন্তু সম্প্রতি দৈনিক যায়যায়দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও সংবাদ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ভিডিওটির মূল বিষয়বস্তু ছিল একজন নারী অভিযোগকারী এবং রেলওয়ের আইন কর্মকর্তাকে ঘিরে। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে ভিডিওটির কভার ফটো এবং ভেতরের ভিজ্যুয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তকীন-এর ছবি—যার সঙ্গে উক্ত ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নেই।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. সুবক্তকীন বর্তমানে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সততা, দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে সরকারি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রেল খাতের বড় অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তার নেতৃত্বে সফলতার দিকে এগোচ্ছে। অথচ কোনো সম্পৃক্ততা ছাড়াই তার ছবি ভিডিও সংবাদে ব্যবহার করায় তার ব্যক্তিগত সুনাম ও মর্যাদা যেমন ক্ষুণ্ণ হয়েছে, তেমনি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভাবমূর্তিও।
ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মো. সুবক্তকীন বলেন—
“আমি উক্ত ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নই। অথচ আমার ছবি ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। এটি আমার ব্যক্তিগত মানহানি এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের শামিল। আমি অবিলম্বে এ বিষয়ে সংশোধনী প্রচার ও প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, সংবাদ পরিবেশনে যথার্থতা ও সততা রক্ষা করা সাংবাদিকতার মৌলিক নীতি। অথচ এ ঘটনায় তা রক্ষা করা হয়নি, যা গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে—
“রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. সুবক্তকীন একজন সৎ, পরিশ্রমী ও দক্ষ কর্মকর্তা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। অথচ অহেতুক তার ছবি ব্যবহার করে সংবাদ প্রচার করায় তার সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এমন ভুল দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিপন্থী।”
সুশীল সমাজের আরেকজন প্রতিনিধি বলেন—
“গণমাধ্যম হলো রাষ্ট্র ও সমাজের দায়বদ্ধতার প্রধান বাহক। তাই সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই এবং দায়িত্বশীলতা অপরিহার্য। অসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ছবি ব্যবহার শুধু ব্যক্তি নয়, একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকেও আঘাত করে। এই ঘটনায় দ্রুত সংশোধনী দেয়া উচিত।”
ঘটনাটি শুধু একটি ভিডিও সংবাদে ছবি ব্যবহারের ভুল নয়, বরং এটি গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা ও পেশাগত সততার প্রশ্ন তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকতা যেমন জরুরি, তেমনি নির্ভুলতা ও প্রাসঙ্গিকতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ভুল ছবি ব্যবহারের মতো ঘটনাগুলো দর্শকের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করে এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে।
বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে সাংবাদিকদের আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।