
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, স্বন্দীপের লঞ্চঘাট জোয়ার এলে পানিতে ডুবে যায়। সেখানে আরও কিছু কাজ প্রয়োজন। ইতোমধ্যে অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে সামান্য উদ্যোগ নিলেই স্বন্দীপবাসীর বড় সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের জুলাই বিপ্লব হলে চট্টগ্রাম শহরে বসবাসকারী সন্দ্বীপবাসীদের এক মিলন মেলা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে ও মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক জহির উদ্দিন বাবরের পরিচালনায় এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
স্থানীয়দের উদ্দেশে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে অবশ্যই স্বন্দীপবাসীর এই সমস্যা সমাধান হবে। তিনি নানা উন্নয়ন কনসেপ্ট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
মেয়র জানান, চসিকের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ১৩টি টেন্ডার ওপেন হয়েছে। এর মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডেই রয়েছে দু’টি বড় কাজ। প্রতিটি প্রকল্পের বাজেট ৭-৮ কোটি টাকা ধরে প্রায় ১৬ কোটি টাকার কাজ সেখানে হচ্ছে। স্বন্দীপ কলোনিতে পাঁচটি রাস্তায় টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া সেকান্দার কলোনির রোডে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার কাজ চলছে। স্বন্দীপ কলোনির মূল নালা পরিষ্কার করা হয়েছে এবং স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী ভোটকেন্দ্র পরিবর্তনের কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সৈয়দ কাশেম রোডকে আগামী টেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে স্বন্দীপ কলোনির মসজিদের উন্নয়নে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন মেয়র।
তিনি আরও জানান, ১৩টি টেন্ডারের পর আগামীকাল থেকে আরও ২৫টি রাস্তার টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এক মাসের মধ্যেই প্রায় ৪০টি রাস্তার কাজ শুরু হয়ে যাবে। এর ফলে চট্টগ্রাম শহরের চেহারাই পাল্টে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। গত ১০ বছরের তুলনায় এবার জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমেছে। তবে কাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
হালিশহরের সমস্যার কথা উল্লেখ করে ডা. শাহাদাত বলেন, ওয়াসার কারণে সেখানে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। তবে অনুমতিহীন কাজ বন্ধ করে দ্রুত সমাধানের জন্য ওয়াসাকে বারবার বলা হয়েছে।
পাশাপাশি এলাকাবাসীর জন্য সুখবর জানিয়ে তিনি বলেন, হালিশহরের বিডিআর মাঠে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে স্থানীয়রা সহজেই হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম করতে পারেন। এইচ ব্লকের মাঠ ও আশপাশের সৌন্দর্যবর্ধনও সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া হালিশহরে একটি বড় কিচেন মার্কেট তৈরি করা হচ্ছে, যা স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করবে।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জনগণের উন্নয়ন ছাড়া রাজনীতির কোনো মূল্য নেই। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চাকা ঘুরাতে না পারলে রাজনীতিবিদ হিসেবে তার কোনো যথার্থতা থাকবে না। তাই যার যেখানে দায়িত্ব, সেখানে যথাযথভাবে কাজ করলে সমাজ ও শহরকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে ইসরাফিল খসরু সন্দ্বীপের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সন্দ্বীপ একটি সমৃদ্ধ জনপদ, যার রয়েছে গৌরবময় অতীত। এখানকার মানুষ খুবই পরিশ্রমী এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। চট্টগ্রাম শহরের উন্নয়নে সন্দ্বীপবাসীর অংশগ্রহণ প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন, সন্দ্বীপ থেকে আসা বহু মানুষ এই শহরে বাস করেন এবং বিভিন্ন পেশায় নিজেদের মেধা ও শ্রম দিয়ে চট্টগ্রামের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। তিনি সন্দ্বীপের মানুষের প্রতি তাদের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন তার বক্তব্যে সবাইকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, এমন একটি মিলন মেলার আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই ধরনের আয়োজন সন্দ্বীপের মানুষকে একত্রিত করে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করে। তিনি ভবিষ্যতেও এমন অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট আবু তাহের, এ্যাব চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সেলিম মো. জানে আলম, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এনামুল হক পিপি, মোস্তফা হাকিম কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলমগীর। উপস্থিত ছিলেন সন্দ্বীপ পৌরসভা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মোশারফ হোসেন দিদার, সন্দ্বীপ উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আকবর হোসেন ভুইয়া, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলাদলের সহ সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর জেসমিনা খানম, নাসিমা আলম, ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রাশেদ, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস আলী, উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক নিজাম উদ্দীন, সন্দ্বীপ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব এম এ আজিজ, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক শাওন উদ্দিন রকি, উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বিপুল খান প্রমুখ।